বিশ্ব জুড়ে মহামারির বিষাক্ত হাওয়া মানুষের রোজকার জীবনযাত্রাকে আমূল বদলে দিয়েছে। চারপাশ স্তব্ধ, নিষেধাজ্ঞার গন্ডীতে ঘেরা। তার কবল থেকে বাঁচতে পারেনি চলচ্চিত্র জগতও। তবে তাই বলে কি আর চলচ্চিত্র নির্মাতারা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন? ফলে এই গৃহবন্দি অবস্থাতেও বেশ কিছু স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা নিজেদের ভাবনাগুলিকে চলচ্চিত্রের রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন। আর সেটি বাড়িতে বসেই। আজ্ঞে হ্যাঁ! মোবাইল অথবা ক্যামেরার সাহায্যে বাড়িতে বসেই তাঁরা বানিয়ে ফেলেছেন বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। সাধারণতঃ এই ছবিগুলি তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রদর্শন করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও সেগুলিকে বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁদের হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে এসেছে ‘স্বাধীন চলচ্চিত্র সমাজ’।

‘স্বাধীন চলচ্চিত্র সমাজ’-এর প্রতিনিধিরা চলচ্চিত্রগুলির গুরুত্ব বিচার করে, পরিচালকদের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সেগুলি দর্শকের পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস নিয়ে ছিলেন। অনলাইন মাধ্যমেই তাঁরা লাইভ স্ক্রিনিংয়ে এক ঘন্টার একটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছিলেন। গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা থেকে ‘স্বাধীন চলচ্চিত্র সমাজ’-এর ফেসবুক পেজ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্মিত মোট আটটি ছবি দেখানো হয়। ‘লকডাউন সিনেমা’ নাম দিয়ে অনলাইন স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমেই এটি করা হয়। এক ঘন্টার এই অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মোট ৯২০ জন দর্শক একসঙ্গে লাইভ অনুষ্ঠানটি দেখেন। তাঁদের তরফ থেকে এই চলচ্চিত্রগুলির ভূয়সী প্রশংসাও পাওয়া গিয়েছে।

‘স্বাধীন চলচ্চিত্র সমাজ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অঙ্কিত বাগচীর কথায় – “এই মহামারীর সময়ে আমরা যখন গৃহবন্দী হয়ে পড়েছি, তখন নতুন প্রজন্মের পরিচালকরা তাদের নিজের ঘরের মধ্যে থেকেই বানিয়ে ফেলেছেন সব দুর্দান্ত লকডাউন সিনেমা। আর চলচ্চিত্রের এই নতুন ভাষাকে অনেক মানুষের কাছে নিয়ে আসা আমাদের লক্ষ্য ছিল। আমরা সফল হয়েছি বলেই আমার বিশ্বাস।” তিনি আরও বলেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম সোসাইটি অর্থাৎ ‘স্বাধীন চলচ্চিত্র সমাজ’-এর মূল উদ্দেশ্য হল, বিশ্বজুড়ে সমস্ত স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উদ্ভাবনী চিন্তা এবং সচেতনময় ফিল্মগুলোকে আমাদের শহর কলকাতায় দেখানোর জন্য একটা প্ল্যাটফর্মের ব্যাবস্থা করা। কারণ এই সমস্ত ছবিগুলো বাণিজ্যিকভাবে আকর্ষণীয় হয় না বলে, সাধারণ দর্শকদের কাছে সেগুলো পৌঁছে দেওয়ার সুযোগও থাকে না। এছাড়াও বিভিন্ন ক্লাসিক সিনেমা এবং টেকনিক্যাল ওয়ার্কশপের মাধ্যমে কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলার সমস্ত আগ্রহী ফিল্মমেকারদের কাছে সিনেমা মাধ্যম এবং ফিল্ম মেকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাকে পৌঁছে দেওয়াটাও তাদের আরেকটি লক্ষ্য।


ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও তার পরিচালকের নাম নীচে দেওয়া হল- ১) পরিত্যক্ত মৌচাক (পরিচালক: কৌস্তভ ভট্টাচার্য) ২) দুঃস্বপ্নের ঘরবাড়ি (পরিচালক: দেবরাজ নাইয়া) ৩) কণ্টাজিয়ন (পরিচালক: অনুরাগ পতি) ৪) এলিমেন্ট ফাইভ (পরিচালক: শুভঙ্কর মজুমদার) ৫) অন-অফ (পরিচালক: তপন এম চিশতী) ৬) জলশহর (পরিচালক: শৌভিক পন্ডিত) ৭) একটি নো-বাজেট ফিল্ম (পরিচালক: অনমিত্র রায়) ৮) কোয়ারেন্টাইন ওয়ার (পরিচালক: দেবতনু)

চিত্র ঋণ – স্নেহাশিস বব দেবনাথ, অঙ্কনা পাল
Discussion about this post