ধরা যাক এক ভরা বর্ষার দিন। জানলা দিয়ে হাওয়ার সঙ্গে ভেসে আসছে জলের ছিটে, ভিজিয়ে দিচ্ছে বইখাতা। রান্নাঘর থেকে খিচুড়ির সুবাসও আপনি পেয়ে গেছেন। শরীর, মন দুটোই চাঙ্গা, খুশি খুশি। তারপর খাওয়ার টেবিলে খিচুড়ি, ডিমভাজা, বেগুনভাজার প্লেটের পাশে আপনার চোখ গেল পাশের পাত্রে। মন তো খুশি ছিলই, এবার যেন তালে-ছন্দে নেচে গেয়ে উঠলো! আপনি দেখলেন পাত্রে থরে থরে সাজানো ইলিশের পেটি। আনন্দে আপনাকে আর পায় কে! দৌড়ে গিয়ে এক টুকরো ভেঙে মুখে পুড়তেই, ‘ও হরি! এ তো মাছ নয়! মিষ্টি!’ খেতে ইলিশের মত না হলেও দেখে সাদা চোখে বোঝার উপায় নেই মোটেও। ইলিশ না পাওয়ার কষ্ট হলেও, এ মিষ্টির স্বাদের ভাগও আপনার কিন্তু দিতে ইচ্ছে হবে না।
ইলিশ পেটি মিষ্টি আসলে এক প্রকারের সন্দেশ। এটি বানানো প্রথম শুরু হয়েছিল মালদায়, মতান্তরে বাংলাদেশের পাবনা জেলায়। এখন এই সন্দেশ দুই বাংলাতেই বেশ বিখ্যাত। ইলিশ পেটি মূলত ক্ষীরের সন্দেশ। এতে ব্যবহার করা হয়না কোন ছানা। অনেক সময় নিয়ে দুধ এবং চিনি জ্বাল দেওয়া হয়। এরপর সেই মিশ্রণ ঘন কাইয়ের মতো হলে তাকে ইলিশ মাছের পেটির আকার দেওয়া হয়ে থাকে। ভেতরে চকলেট পাউডার বা গুড় দিয়ে মাছের পেটের ভেতরের রঙ দেওয়া হয়। রূপোলী রাঙতা দিয়ে তৈরি হয় আঁশ। এর পুরোটাই বানানো হয় হাতে। যিনি বানান, তাঁর শিল্পবোধটিই এই মিষ্টির মূল আকর্ষণ।
দুই বাংলার মতো বৈচিত্র্যময় মিষ্টির সম্ভার পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন না, এমন মানুষও পৃথিবীতে কমই আছেন। দুই বাংলার বাইরে আর কোথাও এত ধরনের মিষ্টিও নেই। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলাতেই সেই জেলার স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মিষ্টিরও বৈচিত্র্য তৈরি হয়েছে। সেই বৈচিত্র্য এতই বেশী, যে কখনও কখনও এক জেলার মানুষ অন্য জেলার মিষ্টি সম্পর্কে জানতেও পারেন না। হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করে হয়ত চমকে ওঠেন। আপনিও বেড়ানোর বা কাজের ফাঁকে ফাঁকে “ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া” শিশির বিন্দু দেখার মত, নিত্য নতুন মিষ্টির স্বাদ আবিষ্কার করতে ভুলবেন না!
Discussion about this post