একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে মানুষ ছুটে চলেছে ধন-সম্পদ, যশ-খ্যাতি আর বিলাসবহুল জীবনের পিছনে। অথচ জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে পেছনে তাকালে মনে হয় টাকা-পয়সা, বৈভব সম্পত্তি সব আছে। নেই খালি সুখ- শান্তি। সব শেষে জীবনের খাতার হিসেব কিছুতেই মেলে না। তাহলে? সব দিক থেকেই ভালো থাকা যায় এমন পাসওয়ার্ড কি কিছুই হতে পারে না? হ্যাঁ অবশ্যই পারে। ছোট্ট একটা জাপানি শব্দ- ‘ইকিগাই’। জাপানি ভাষায় ‘ইকি’ শব্দের অর্থ জীবন আর ‘গাই’ এর অর্থ মূল্য। দুটোকে একসাথে বেঁধে দিলে দাঁড়ায় জীবনে বেঁচে থাকার অর্থ। অর্থাত্ যে জিনিসগুলো আপনাকে আরো বেশি বছর বাঁচার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়, সেটাই হচ্ছে ইকিগাই।
জীবনের ইনিংস লম্বা করতে চাইলে ভালো জীবনযাত্রার কোনও বিকল্প নেই। অন্তত জাপানের অধিবাসীদের দিকে দৃষ্টি দিলে চিত্রটা একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে। জাপানের মানুষ বিশ্বাস করে যে আপনি জীবনে এমন একটি কাজ করুন, যেটা করতে আপনি ভালোবাসেন এবং যে কাজটা আপনি ভালোভাবে করতেও পারেন। তাদের দাবি, এমন কাজ করলে আপনি ভালো থাকবেন, সুখী থাকবেন, দীর্ঘদিন বেঁচেও থাকবেন। জাপানি দর্শনের ইকিগাই নামক তত্ত্ব অনুযায়ী তাদের কাছে ভালো থাকার ধারণাটাই হচ্ছে- ব্যস্ত থাকা।
জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ওকিনাওয়ার মানুষ পৃথিবীর যে কোনও অঞ্চলের মানুষের চেয়ে এমনকি জাপানেরও অন্যান্য এলাকার মানুষের চেয়ে বেশি বছর বাঁচে। তাদের গড় আয়ু বেশি। এদের মধ্যে অনেকেই শতবর্ষী তকমাপ্রাপ্ত। ভাবা যায়! একবার দুই বিশিষ্ট লেখক ওই দ্বীপে শতবর্ষী মানুষদের সাক্ষাত্কার নিতে গিয়ে তদের ভালো থাকার রহস্য উদঘাটন করেন। সাক্ষাত্কারে জেনেছিলেন তা খানিকটা এরকম – জাপানিদের অভিধানে অবসর বলে কোন শব্দ হয় না। অফিস থেকে অবসর নিলেও বাড়িতে যার যা করতে ভালো লাগে তাই নিয়ে মেতে থাকা। তাদের মতে, সেটা করলে বেঁচে থাকার আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে যায়। পরিমিত খাওয়া-দাওয়াই সুস্থ থাকার সহজ উপায় বলেই তারা মনে করেন। নিজের শরীরের যত্ন নেওয়ার আসল উদ্দেশ্য হলো পরবর্তী জন্মদিনে নিজের সঠিক আকারকে ধরে রাখা। অর্থাৎ শরীর যেন কোনোভাবেই আকারে বুড়িয়ে না যায়। বিপদে-আপদে সবসময় কাছে পাওয়া যায় এবং প্রয়োজনের সময় সুপরামর্শ পাওয়া যায় এমন কিছু ভালো বন্ধুদের জীবনে প্রয়োজন। জাপানিদের মতে, আজকের পুরো দিনটাই যখন আপনার,তাই দিনটা মনের মত করে কাটানোর উপায়টাও আপনাকেই বের করতে হবে।
সাক্ষাৎকারের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সেই দুই বিশিষ্ট লেখক হেক্টর গার্সিয়া এবং ফ্রান্সেস মিরেলস “ইকিগাই: দ্য জাপানিজ সিক্রেট টু এ লং এন্ড হ্যাপি লাইফ” নামের একটি বই লেখেন। যা বর্তমানে গোটা দুনিয়াতেই বেস্ট সেলিং বই হিসেবে পরিচিত। তাঁদের সুখী জীবনের সেই পথ জেনে নিয়ে দেশ বিদেশের অনেক লোকেই আগের থেকে অনেক ভালো আছেন। যাই হোক, জাপানিদের ইকিগাই-এর রহস্য তো জানলেন, এবার আপনার ইকিগাই সঠিকভাবে খুঁজে পেতে হবে। তাহলেই হেসে খেলে বেশ অনেকগুলো বছর এই ধরাধামের সুখ উপভোগ করতে কোনো বাধাই বাধা মনে হবে না। তা একটু বিলাসিতার সঙ্গে কম্প্রোমাইজ না হয় করলেন, তাতে ক্ষতি কী?
Discussion about this post