খাদ্যরসিক শহরবাসীর জন্য বরাবরই স্বপ্নের রাজ্য রূপকথা রোড। পাবনা শহরের সবথেকে পুরনো খাবারের আঁতুড়ঘর এই রাস্তা। রূপকথা সিনেমা হলের নাম থেকেই এই রাস্তার এমন নামকরণ হয়েছে। সারাবছর খাবারের পসরা সাজিয়ে বসে থাকা এই রোড রমজান এলে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
রমজানের সময় সারাদিন শহরের বিভিন্ন খাবারের দোকানে খাবার তৈরি হয় না। বিভিন্ন ফল বা মিষ্টির দোকান খোলা থাকলেও অন্য খাবারের দোকানে খাবার তৈরি করা হয় দুপুরের পর থেকে। যেহেতু সারাদিন রোজাদাররা কিছু খান না, তাই এরকম নিয়ম চলে আসছে ইফতারের আয়োজন এই রাস্তায় আকর্ষনীয় এবং লোভনীয়। সকাল বেলা পরোটা-ডাল অথবা খিচুড়ি-আলুভর্তা-ডিম ভাজা দিয়ে দিন শুরু হয় প্রায় বেশিরভাগ দোকানীর। রমজান মাসে যদিও তা বন্ধ থাকে। তারপর দুপুরের প্রথম আকর্ষণ মাটন/ চিকেন/ বিফ বিরিয়ানি এবং তেহারি। মোরগ পোলাওটাও কিন্তু বাদ যায় না। পাশাপাশি সমস্ত দোকানে লাল কাপড়ে ঢাকা বড় হাঁড়ি আর তার ঘ্রাণে সুরভিত পুরো রাস্তা। বোরহানি এগুলোর সাথে খুব দরকারি একটি পানীয়। রোজা শরীরে টকদইয়ের তৈরি এই পানীয় আরাম দেয়। এরই সাথে চলে মোগলাই, টিকিয়া, শিক কাবাব, তন্দুরী চিকেন, তন্দুরী রুটি, নান, হালিম, নেহারি সহ মাংসের বিভিন্ন পদ বানানোর প্রস্তুতি। বিকেল সন্ধ্যের দিকে জোর কদমে এসবের কেনা বেচা শুরু হয়। রমজান মাসে এগুলোর সবটাই শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। বিরানি হাউজের মোগলাই আর হালিম শহরবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন ধরনের ডাল আর মাংস সহযোগে তৈরী এই পদ যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যকর।
তবে শুধু রূপকথা রোড নয়, রমজান মাসে ইফতারের আয়োজন করেন পুরো শহরবাসী। বড়বাজার, ইন্দারা, ট্রাফিক মোড়সহ শহরের বিভিন্ন স্থান মৌসুমি খাবারের দোকানে সেজে ওঠে। ভাজাপোড়া ছাড়া ইফতার ব্যাপারটাই যেন অসম্পূর্ণ। প্রায় প্রতিটি দোকানেই এই সময় শুরু হয় অস্থায়ীভাবে বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, জিলিপি, সমুচা, ডালপুরি, সিঙ্গারা তৈরি। ছোলা-মুড়ি আর খেজুর ইফতারের মাস্ট নিডেড আইটেম। তাই ছোলাভুনাও এইসময় সব দোকানেই পাওয়া যায়। জলযোগের সিঙ্গারা চপের খ্যাতি পুরো দেশজুড়ে পাওয়া যায়। আবার সরু জিলিপির জন্য প্যারাডাইস সুইটস বিখ্যাত। ফুটপাতে এ সময় প্রচুর ইফতার বিক্রেতাদের দেখা যায়। এনারাই মৌসুমি দোকানী হিসেবে পরিচিত। ফলের দোকান ছাড়াও ছোট বড় সব দোকানে এসময় সৌদি আরব থেকে আনা খেজুর দেখা যায়। রাস্তায় ভ্যান বা টুল নিয়ে বসেও অনেকে খেজুর বিক্রি করেন। এছাড়াও সারাদিন রোজা রেখে শরীর ঠান্ডা রাখতে তরমুজ, বাঙ্গি, ডাবসহ বিভিন্ন ফলের প্রতি চাহিদা সকলেরই আছে।
উৎসবের মরসুমে মিষ্টিমুখ অপরিহার্য। তাই মিষ্টির দোকানেও রয়েছে ভিড়। তবে অন্যান্য মিষ্টির তুলনায় জিলিপির চাহিদাই এসময় বেশি থাকে। সারাবছর জিলিপি না বানালেও, এইসময় পাবনার সমস্ত মিষ্টির দোকানেই জিলিপি ভাজা হয়। তবে অনেকেই আছেন যারা বাইরের খাবার ঠিক পছন্দ করেন না। তাই ভিড় জমে শহরের মুদিখানার দোকানে। সেমাই, নুডলস, বাসমতি চাল, পাউরুটি, ময়দা এসব কিনে নিজেরাই বাড়িতে বানান মুখরোচক এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য। ডিম, মাছ, মাংস, সবজি এসবও বাদ যায় না। তবে নিত্যদিন জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ইফতার বাজারে এসে অসন্তুষ্ট ক্রেতার সংখ্যাও কম নয়।
Discussion about this post