শীতকালে তাপমাত্রা ১০ এর নীচে নামতেই আমরা বাঙালিরা কাবু হয়ে যাই। রাত বাড়তেই পথঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। আর হাড়কাঁপানো ঠান্ডা বলতে আর হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বলতে লাদাখ কিংবা কাশ্মীরের বরফে মোড়া পাহাড়। -৬০ ডিগ্রী তাপমাত্রা আমরা কল্পনা ও করতে পারি না। রাশিয়ার ওইমিয়াকন অঞ্চলে বাস্তবে সেটা লক্ষ্য করা যায়।
পৃথিবীর বুকে হিমশীতল যে অঞ্চলগুলি রয়েছে তার মধ্যে সাইবেরিয়া অন্যতম প্রধান। সেই সাইবেরিয়ার ইয়াকুটিয়া অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম ওমিয়াকন। প্রায় ৫০০ জন মানুষের ছোট্ট জনপদ। প্রতিবছরই যেখানে শীতকালের গড় তাপমাত্রার পৌঁছায় অন্ততপক্ষে -৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কখনো বা তারও বেশি।২০১৩ সালে ওমিয়াকনে তাপমাত্রা নেমে দাঁড়িয়েছিল –৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর তারপরই পৃথিবীর শীতলতম স্থায়ী বসবাসকারী অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃতি পায় রাশিয়ার এই ছোট্ট জনপদ।
শীতকালে ওমিয়াকনে মাত্র তিন ঘণ্টার জন্য দেখা দিয়ে যায় সূর্য। বাকি ২১ ঘণ্টা জুড়েই ঘিরে থাকে ঘন অন্ধকার। আর অন্ধকার হতেই ধীরে ধীরে কমতে থাকে উষ্ণতা। অন্ধকার হয়ে এলেও তুষারপাতের মধ্যেই চলতে থাকে জীবন-জীবিকার লড়াই। -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও খোলা থাকে ওমিয়াকনের স্কুলগুলি। আর্কটিক সার্কেলের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এই গ্রাম থেকে নিকটতম বড় শহরের দূরত্ব ৫০০ মাইল। কাজেই খাদ্য, জ্বালানি এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত রাখতে হয় গ্রামেই। ছোটো ছোটো দোকান নিয়েই হাড় কাঁপানো শীতে চলে বেচা-কেনা। প্রধান খাদ্যদ্রব্য বলতে রেনডিয়ারের স্যুপ, মাংস, ঘোড়ার লিভার, ট্রোগেনিনা, ক্যাটফিস প্রজাতির স্যামন, হোয়াইট ফিস প্রভৃতি মাছ এবং ম্যাকারোনি। ঘোড়ার রক্তের আইস কিউবও রীতিমতো জনপ্রিয় ওমিয়াকনের মানুষের খাদ্যতালিকায়।
শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও সত্যি। প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে লড়াই করতে, শরীরকে উত্তপ্ত রাখতে কাঁচা মাছ এবং মাংস খাওয়ার চল এই গ্রামে। পাশাপাশি জ্বালানির ব্যবহারে রান্না করাও বেশ দুঃসাধ্য এই অঞ্চলে।অন্যদিকে বেশিরভাগ শীতপ্রধান অঞ্চলেই অ্যালকোহলের প্রচলন খুবই স্বাভাবিক। তবে ইয়াকুতিয়ানদের মেনু থেকে একেবারেই বাদ মদ্যপানীয়।
Discussion about this post