বাংলা তথা বাঙালির প্রধান উৎসব দুর্গা পুজো। বাংলায় ঠিককে এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন তা নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে স্বাদ বদলাচ্ছে মানুষের ভাবনার ও সংস্কৃতির। ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে পিছনে ফেলে মানুষ মেতে উঠছে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্ণময় থিম পুজোয়। আড়ম্বরপূর্ণ থিম পুজোর এই হিড়িকেও আজও বাংলার বনেদী পরিবার, জমিদারবাড়ি কিংবা রাজ পরিবার পরিচালিত দুর্গা পুজোগুলি শতাব্দীপ্রাচীন সংস্কৃতির ধারক ও বাহকরূপে আমাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বনেদিয়ানার সার্থক রূপেরই বাহক খসমরা গ্রামের প্রায় ২২৯ বছর আগে শুরু হওয়া ঘোষ পরিবারের প্রাচীন দুর্গা পুজো।
ঘোষ পরিবারের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস বর্ধমান জেলার কোনো এক অখ্যাত গ্রামে। পূর্বপুরুষীয় উত্তরাধিকার সূত্রে এই বংশের স্বর্গীয় পূর্বপুরুষ নর্মদা ঘোষ বসবাস শুরু করে এই খসমরা গ্রামে। রামরাম ঘোষের হাত ধরেই শুরু হয় এই সদগোপ পরিবারের দুর্গা আরাধনা। কথিত আছে পারিবারিক কারণে শোকাহত রামরাম ঘোষ পুকুরে ঝাঁপ দেয়ার সময়ই তাকে বিরত করেন এক সধবা বৃদ্ধা মা। সেই বৃদ্ধা রামরাম ঘোষকে তার এই কর্মের কারণ জানতে চান এবং দারিদ্র্য- দুর্গতির মুক্তির জন্য দেবী দুর্গার পূজা করার কথা বলেন। অভাব-অনটনের সংসারে দুর্গাপুজা রামরাম ঘোষের কাছে ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ঘটনা। এরপরই অলৌকিকভাবে রামরাম ঘোষ ভিটার ধানের গোলা থেকে মোহর পান। মায়ের প্রথম দিকে পূজা হয়েছিল তাল পাতার ঘরে, নৈবেদ্য ছিল কলাপাতায়। সন্ধ্যাকালীন শীতল দেওয়া হত মাটির মালসায়। বর্তমানে পিতলের থালায় ছোটো কলাপাতায় নৈবেদ্য এর ফল দেওয়া হয় এবং সন্ধ্যাকালীন ভোগের লুচি দেওয়া হয় মাটির মালসায়। ঘোষ পরিবারের পুজোর নৈবেদ্য পরিবারের সকল পুরুষরা সাজান।
সন্ধিপুজোয় দেবীকে চামুণ্ডা রূপে পুজো করা হয়। অষ্টমীর সন্ধি পুজোয় বাড়ির বউরা ধুনো পোড়ান। সন্ধি পুজোর সময় জবার মালা, অপরাজিতার মালা, আকন্দ মালা, শ্বেত ও রক্ত করবীর প্রয়োজন হয়। নবমীর দিন মাকে নৈবেদ্যের সাথে নিবেদন করা হয় থোড়, পলতা, কচু, পুঁই শাক। নবমীর দুপুরে ১০৮টি বিল্বপত্রের সহযোগে মায়ের হোম কার্য সম্পন্ন হয়। দশমীর দিন সন্ধ্যায় বরণের পর বাঁশের দোলায় মাকে স্থানীয় কৌশিকী খালে নিরঞ্জন করা হয়।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – আদিত্য নারায়ণ ঘোষ
Discussion about this post