১৫ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। আনন্দ, উদযাপনের দিন। তবে এই স্বাধীনতা দেশভাগের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দিনও বটে। এই দেশভাগের ফলেই গঠিত হয়েছিল আমাদের প্রতিবেশী দেশটি। এই প্রতিবেশী বাংলাদেশের কাছে ১৫ই আগস্ট দিনটি কিন্তু শোক দিবস। কারণ? দেশভাগের যন্ত্রণা তো আছেই, তবে তার চেয়েও বড়ো কারণ রয়েছে। দিনটি আসলে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিন। ভারতের স্বাধীনতার ২৮ বছর পর এই দিনেই খুন করা হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দেশের মানুষ দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করেন। নেতৃত্বের পদ ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন মানুষের কাছাকাছি, মাটির কাছাকাছি থাকার মানুষ।
প্রাথমিক শিক্ষা ও ম্যাট্রিকুলেশনের পরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট অফ আর্টস এবং সেখান থেকেই ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করেন তিনি। ১৯৪৩ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র থাকাকালীন কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মুজিব। পরবর্তীকালে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে নিরস্ত্র বাঙালির ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা। আক্রমণের শুরুতেই তারা বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে আটক করেছিল। মুজিবের আটক হওয়ার খবরে ভেঙে পরেছিল দেশবাসী। বাংলাদেশের বিজয়ের পর তাঁকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭৫ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি হন।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মুজিবুর রহমানের জীবন মানেই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। ভারত বিভাগের পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের পেছনেও কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে তাঁকে বাংলাদেশের ‘জাতির জনক’ বা ‘বঙ্গ পিতা’ বলা হয়। সাড়ে নয় মাস পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলে আটক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু শত আক্রমণের সামনেও তিনি হিংস্রতা দেখাননি। তাঁর সারা জীবন ধরেই তিনি বারবার শান্তির পক্ষে কথা বলেছেন। বারবার বলেছেন তিনি থাকবেন শোষিতের পক্ষেই। একটি দেশের সর্বোচ্চ পদে থাকার পরেও দেশের মানুষ সরাসরি তাঁকে চিঠি লিখতেন “শেখ মুজিব ভাই” এই সম্বোধনে। এই আন্তরিকতার কারণেই সাধারণ মানুষের এত প্রিয় ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার শুরুতে বিদেশের বিমানবন্দরে বাংলাদেশের নাম চিনতে না পারলে মানুষ শুধু মুজিবের নাম বলতেন। কাজ হত তাতেই।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বিজ্ঞানী মাদাম কুরি ও পিয়েরি কুরিকে স্মরণ করে যে ‘জুলিও কুরি’ পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়েছিল, তা দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে। স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্রনেতার সেটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক পদক অর্জন। বিশ্ব শান্তি পরিষদ ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে, মানবতার কল্যাণে, শান্তির সপক্ষে বিশেষ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুকে এই সম্মান দিয়েছিল। নিপীড়িত সাধারণ জনগণের প্রতিনিধি, বিশ্বশান্তির এই দূতকে আজকের দিনেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
Discussion about this post