“রামগরুড়ের ছানা, হাসতে তাদের মানা, হাসির কথা শুনলে বলে, হাসবো না না না না।” হাসতে মানা অবশ্য কবিতায় থাকলেও বাস্তবে একেবারেই নেই। উল্টে হাসলে শরীর মন দুইই ভালো থাকে বলে জানা যায়। তবে যারা হাসাতে থাকেন আমাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য তাদের জীবনটা আসলে কেমন হয়? ঠিক এমনই এক মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে কথা হচ্ছে আজকে। মানুষটি আর কেউ নন, আমাদের সবার পরিচিত মিস্টার বিন। যার আসল নাম রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন। ডাকনাম ছিল রো। যিনি একাধারে একজন ব্রিটিশ লেখক, অভিনেতা এবং কমেডিয়ান।
১৯৫৫ সালের ৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের ডারহাম বিভাগের কনসেটে জন্মগ্রহণ করেন রোয়ান। ছোটবেলা থেকেই রোয়ান ভীষণ হাসিখুশি একজন মানুষ। তবে তিনি খুব একটা কথা বলতেন না। ডারহামের ক্যাথেড্রাল স্কুলেই তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু। সেখানেই একটি ফিল্ম সোসাইটি ছিল। ফিল্ম সোসাইটির প্রধান বিষয়ই ছিল হাসির সিনেমা বানানো। আর সেই ছিল তার সুযোগ। আগ্রহ জন্মায় অভিনয়ের প্রতি। শুরু হয় মঞ্চের ব্যাকস্টেজে কাজ করা। কিন্তু বাধ সাধে তোতলামি। যার ফলে বার বার অভিনয়ের সুযোগ হারিয়েছিলেন মি. বিন। এরকম মুহূর্তে চরম হতাশা তাকে গ্রাস করলেও তিনি অভিনয় ছাড়েননি।
এরপরই তার সঙ্গে পরিচয় হয় রিজার্ড কার্টিস নামের একজনের সঙ্গে। রিচার্ড সাধারণতঃ অভিনয় করতেন কমেডি চরিত্রে। এরপরই দুজনে মিলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলেন ‘অক্সফোর্ড নাট্যশালা’। বিবিসি রেডিও থ্রিতে ‘দ্য অ্যাটকিনসন পিপলস’ নামের একটি স্যাটারিক্যাল ইন্টারভিউধর্মী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতেন। পরে ১৯৮৩ সালে ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পায় রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনীত মুভি ‘ডেড অন টাইম’। ঠিক তার পরের বছরই অক্টোবরে জেমস বন্ড সিরিজের ছবি ‘নেভার সে নেভার এগেইন’ মুভিটি মুক্তি পায়। এরপরই তার জীবনে আসে সোনালী দিন। ১৯৯০ সাল থেকে ‘মি. বিন’ নিয়ে টেলিভিশন পর্দায় হাজির হন রোয়ান অ্যাটকিনসন। এর বাইরেও রোয়ান আমাদের কাছে পরিচিত মিস্টার বিন, সিটকম্ ব্লাকাডার এবং নট দ্য নাইন ও’ক্লক নিউস ব্যঙ্গরচনা স্কেচ্ শো-এর মত উপস্থাপনাগুলির জন্য।
১৪ পর্বের এই সিরিজটি পূর্ণ হওয়ার পর ২০১২ সালে তিনি একটি সিদ্ধান্তে আসেন। তিনি বলেন, বয়স বাড়ার কারণে আর তিনি মি. বিন হয়ে দর্শকদের সামনে আসবেন না। সিরিয়াস চরিত্রেই অভিনয় করবেন তিনি। তবে তার এই সিদ্ধান্তে একেবারেই অটল থাকতে পারেননি তিনি। প্রবীণ বয়সে মি. বিন কে নিয়ে কিছু করার লোভ সামলানো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। একজন বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করা তার জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। কথার বাধা কাটিয়ে রোয়ান এভাবেই মি. বিন হয়ে রয়ে গেছেন প্রতিটা মানুষের হৃদয়ে।
Discussion about this post