একসময়ে পৌষ মাস ছিল বাঙালির পিঠে-উৎসবের মাস। শহর থেকে গ্রাম— এই উৎসব তখন চলত সবখানেই। তখনও যৌথ পরিবারে ভাঙন ধরেনি। মেয়েরা তখনও অন্দরমহল ছেড়ে চাকরির পথে পা বাড়াননি। একান্নবর্তী পরিবারে হেঁশেলের দায়িত্ব সামলাতেন মা-কাকিমা- জেঠিমারা। তাঁরাই রান্না শেখাতেন। সেই সময়ে পৌষ সংক্রান্তির দিন বাঙালির হেঁশেল ম-ম করত পিঠেপুলি আর পায়েসের গন্ধে।
প্রাচীন কালে যখন সন্দেশ, রসগোল্লার আর্বিভাব হয়নি’; তখন তো মিষ্টি বলতে বাঙালি এই পিঠে পুলিকেই জানত। ইতিহাসের সূত্র অনুযায়ী আর্যরাই নাকি ক্ষীরের ব্যবহার শুরু করে। পরবর্তী কালে ক্ষীরের সঙ্গে চালের গুঁড়ো, নারকেল,গুড় ইত্যাদি মিশিয়ে পিঠে তৈরি শুরু হয় বাঙালির হেঁশেলে। নানা ধরনের উপকরণ দিয়ে তখন তৈরি হত ভিন্ন স্বাদের পিঠে। পুলিপিঠের মধ্যে থাকত মুগের পুলি, ভাজা পুলি, দুধ পুলি, চন্দ্র পুলি আর সেদ্ধ পুলি। অন্য ধরনের পিঠে বলতে পাটিসাপটা, গোকুল পিঠে, পোস্তর পিঠে, নারকেল পিঠে, সরু চাকলি, গড়গড়া, পাতসিজা ইত্যাদি।
ঠাকুরমার ঝুলি, চাঁদমামার গল্প আর পড়ে না এখনকার বাচ্চারা। এসবের জায়গায় নিয়েছে ডোরেমন, পোকেমন, নিনজা হাতোরিরা। তেমনই বাঙালির হেঁশেলের একান্ত আপন পৌষের পিঠে পুলিও ধীর পায়ে বিদায়ের পথে। তবে রসনায় পিঠে পুলির আকর্ষণ আজও অপ্রতিরোধ্য। তাই হারিয়ে যাওয়া পিঠে পুলির চেনা স্বাদ ফিরিয়ে আনতেই আজ উদ্যোগী বিভিন্ন ক্লাব। শুরু হয়েছে অঞ্চল ভিত্তিক বিভিন্ন পিঠেপুলি উৎসব।
Discussion about this post