পড়তে বসে পড়া হয়নি বলে বেজায় পিটুনি। এ আর এমন কি ব্যাপার! সব ছাত্র ছাত্রী এ বিষয়ে অবগত। বাবার কাছে পড়তে বসে মার খাওয়া নতুন নয় মোটেই। ঠিক একই ভাবে বাবার হাতের পিটুনির স্বাদ পেয়েছেন স্বয়ং বিদ্যাসাগর মহাশয়। শুনে চোখটা বড়ো বড়ো হয়ে গেলেও একেবারে সত্যি কথা। বিদ্যাসাগরের ছোটবেলার কিছু ঘটনা বেশ মজার। শোনা যায়, যা বলা হতো ঠিক তার উল্টোটাই করতেন বিদ্যাসাগর। তার যেমনি ছিল রাগ তেমনি এই গোয়ার্তুমি। তবে তাঁর পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বেশ সচেতন। ছেলেকে আদর করে ডাকতেন ‘ঘাড় কেঁদো’ বলে। তবে উল্টো কাজের জ্বালায় জেরবার হতেন তিনি। পরিষ্কার জামা পরতে বললে বিদ্যাসাগর পরতেন ময়লা জামা। ডুব দিয়ে স্নান করতে বললে ঠায় ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতেন স্নান না করে। চোখের সামনে এসব দেখে বেজায় চটে যেতেন পিতৃদেব।
বিদ্যাসাগরের টিকি বেঁধে রাখার গল্প হয়তো সবাই জানেন। তবে তিনিও কিন্তু পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়তেন। প্রদীপের আলোয় পুঁথি পড়তেন তিনি। ঠাকুরদাসবাবু বাড়ি ফিরে দেখতেন সামনে মুগ্ধবোধের পুঁথি খোলা। প্রদীপ জ্বলছে নিজের তালে। আর ঘুমিয়ে কাদা বিদ্যাসাগর। অমনি রাগ মাথায় চড়ে গেলো তার। কাজের থেকে ফিরে ওই রাতেই প্রচণ্ড প্রহার করতেন ছেলেকে। এ দৃশ্য দেখে ছুটে আসতেন প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশী রাইমণির অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন বিদ্যাসাগর। তাই ছুটে এসে উনি ঠাকুরদাস বাবুকে বলতেন, “ছোট ছেলেকে এমনভাবে মারধর করলে মরে যাবে তো! এরকম যদি করেন, তাহলে ওকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যান। চোখের সামনে এসব দেখতে পারবো না।”
তবে বাবা ছেলের সম্পর্ক যে শুধু প্রহারের, তা নয়। মন উজাড় করা শ্রদ্ধা ছিল তার পিতার প্রতি। অন্যদিকে বাবাও ভীষণ স্নেহ করতেন ছেলেকে। মাইলস্টোন দেখে অক্ষর চেনা, সেও তাঁর পিতার হাত ধরেই। শুধু চেনাই না, পথ চলতে চলতে তার পরীক্ষাও নিতেন পিতা। তাঁর পিতাকে তাঁর গুরু কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “দাদা মহাশয়, আপনি ঈশ্বরের লেখাপড়ার যত্ন করিবেন। যদি বাঁচিয়া থাকে, মানুষ হতে পারিবেক।” আর আজ তিনি শুধু মানুষ নন, বাঙালির নবজাগরণের শ্রেষ্ঠ মানব। এ ঘটনা থেকেই বলা যায়, সবাই বিদ্যাসাগর হবে না ঠিকই। তবে, মা বাবার পিটুনি বৃথা যায় না সন্তানকে মানুষ করতে।
Discussion about this post