হঠাৎ দেখলে কচ্ছপ বলে ভুল হতেই পারে। তবে একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলেই চমকে উঠতে হয়। আরে! এ যে আস্ত এক সাবমেরিন। হ্যাঁ বিখ্যাত সাবমেরিন ‘দ্য আমেরিকান টার্টল’-এর কথাই বলা হচ্ছে। মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে সাবমেরিনই ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আমেরিকার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। ঠিক কবে আবিষ্কৃত হয় বিশ্বের প্রথম সাবমেরিন? প্রশ্নটি করলে হয়ত অনেকেই উত্তর দেবেন প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাগাদ। কিন্তু তারও বহু বছর আগেই পৃথিবী দেখে ফেলেছিল জলের নীচে চলা চমকে দেওয়ার মত যুদ্ধের এক অস্ত্র! আর ঠিক সেইসময় এই অস্ত্র বানানো হয়েছিল ব্রিটিশদের পরাস্ত করার জন্যই। আসুন শুনে নেওয়া যাক সেই কাহিনীই।
১৭৭৫ সাল নাগাদ গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে শুরু হল আমেরিকার ১৩টি উপনিবেশের বিদ্রোহ। ইতিহাসে যা মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধ নামেই পরিচিত। শুরুর দিকে শুধুমাত্র উপনিবেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও পরেরদিকে কানাডা, ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজেও হু হু ছড়িয়ে পড়ে এই লড়াইয়ের আগুন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য দরকার বেশ শক্তিশালী অস্ত্রের। ঠিক সেই সময়ই আমেরিকান উদ্ভাবক ডেভিড বুশনেলের মাথায় এক বুদ্ধি খেলে যায়। ঠিক ১০০ বছর আগের এক আবিষ্কারকে যুদ্ধের কাজে লাগানোর ফন্দি আঁটেন তিনি। ১০০ বছর আগে সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ডাচ বিজ্ঞানী কর্নেলিয়াস ভ্যান ড্রেবেল প্রথম সাবমেরিনটি আবিষ্কার করেন। সেই সাবমেরিনকেই বেশ কয়েক বছর ধরে আরও ঘষে মেজে লড়াইয়ের উপযোগী করে তুলছিলেন বুশনেল। কিছুটা সফলও হয়েছিলেন। তবে সম্পূর্ণ ব্যাপারটিই ছিল অত্যন্তঃ গোপনীয়। মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সব বিধিনিষেধ ভেঙ্গে ঝুলি থেকে সেই গোপন অস্ত্রই বের করেন বুশনেল। ১৭৭৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আক্রমণের জন্য তৈরি হয় ‘দ্য আমেরিকান টার্টল’।
সাবমেরিনটি দেখতে ছিল কিছুটা কচ্ছপের মতই। দুটো শেল বা খোলসকে জুড়ে বানানো হয়েছিল এটি। লম্বায় প্রায় ১০ ফুট ও প্রায় ৩ ফুট চওড়া এই সাবমেরিনটির বাইরে ছিল স্টিলের শক্ত আবরণ। এরপর এল সেই যুদ্ধকালীন রাত। ম্যানহাটন দ্বীপের দক্ষিণে থাকা ব্রিটিশদের ঈগল জাহাজটিকে টাইম বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিতে যাত্রা শুরু করে টার্টল। মিশনটির নেতৃত্বে ছিলেন আমেরিকান সার্জেন্ট এজরা লি। তবে বহু চেষ্টা করেও ঈগলের গায়ে বোমা লাগিয়ে জাহাজটিকে ধ্বংস করার সমস্ত প্রচেষ্টা বিফলেই চলে যায়। ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন লি। এরপর ৫ অক্টোবর সাবমেরিনটি নিয়ে আরেকবার চেষ্টা চালান তিনি। তবে এবারও ব্রিটিশ আর্মির চোখে পড়ে যাওয়ায় মিশনটি শেষ না করেই ফিরে আসতে হয় তাকে। আরও কিছুদিন পর শত্রুপক্ষের ছোঁড়া বোমার আঘাতে শেষমেশ ধ্বংসই হয়ে যায় সাবমেরিনটি। এরপর সাবমেরিনের সাহায্যে শত্রুপক্ষের জাহাজ ধ্বংস করতে আমেরিকানদের লেগে যায় প্রায় ১০০ বছর। ১৮৬৪ সালে গৃহযুদ্ধে ব্যবহৃত যুদ্ধ জাহাজ এইচ. এল. হানলি প্রথম সাবমেরিনের শিকার হয়।
তবে এতকিছুর পরও আমেরিকানদের কাছে ব্যর্থতার এক কাহিনী হয়েই থেকে গেল আমেরিকান টার্টল। তবে সাবমেরিনটির প্রতি তাদের ভালবাসা এখনও অটুট। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন এই প্রচেষ্টাটিকে ‘এফর্ট অফ আ জিনিয়াস’ বলে আখ্যাও দিয়েছিলেন৷ বীরের সম্মান পেয়েছিলেন বুশনেল এবং লি-ও। মিশনটি ব্যর্থ হয়ত হয়েছিল ঠিকই, তবে আগামী দিনের সাবমেরিন প্রস্তুতির বীজও বুনে দিয়ে গিয়েছিল অচিরেই।
চিত্র ঋণ – foxtrot alpha, Turtle Forum
Discussion about this post