অঙ্কে ফেল। গরীব বাবার গরীব ছেলে। সত্তরের দশকে সেই ব্যক্তি শুরু করেছিল আইসক্রিমের ব্যবসা। আজ সেই আইসক্রিম ব্র্যান্ডের দাম ২০ হাজার কোটি টাকা! তিনি হলেন দক্ষিণ ভারতের আইসক্রিম ম্যান আর জি চন্দ্রমোগান। তিনি সেই ১৯৭০ সালে সম্পত্তি বিক্রি করে সামান্য কিছু পুঁজি দিয়ে শুরু করেছিলেন তাঁর ব্যবসা। বাকিটা ইতিহাস।
আর জি চন্দ্রমোগানের জন্ম তামিলনাড়ুর বিরুধনগর জেলার থিরুথাঙ্গালে। তাঁর বাবার ছিল মুদির দোকান। বলা বাহুল্য, এই দোকানের সাহায্যে সংসার ভালমত চলত না। অর্থাভাবে চন্দ্রমোগান পড়াশোনাও করতে পারেন নি। তাঁর প্রিয় বিষয় অঙ্ক হলেও, সেই অঙ্কতেই তিনি ফেল করেন। কিছু একটা করার বাসনা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত। ১৫ বছর বয়সে, তিনি কয়লা ডিপোতে কাজ শুরু করেন। মাসে ৬৫ টাকা বেতন পেতেন। ২১ বছর বয়সে চন্দ্রমোগান অভাবের তাড়নায় তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে চেন্নাইয়ের রায়পুরমে আইসক্রিমের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি নিজে ওই ছোট কারখানায় তিনজন শ্রমিক নিয়ে কাজ করতেন এবং রাতে সেখানেই ঘুমোতেন।
বর্তমানে চন্দ্রমোগান ভারতের সবথেকে বড় বেসরকারি ডেয়ারি কোম্পানির মালিক। কলকাতা সহ বাংলায় ‘অরুণ আইসক্রিম’ নামে যে ব্র্যান্ড জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তা আসলে শুরু হয়েছে এই চন্দ্রমোগানের হাত ধরেই। রায়পুরমের সেই ঘর থেকেই তাঁর এই বিশাল যাত্রা। তাঁর সংস্থার নাম ‘চন্দ্রমোগান হাটসন অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস’। দেশের অন্যতম বড় বেসরকারি দুগ্ধ কোম্পানি এটি। কোম্পানিটি ১০ হাজার গ্রামের ৪০ হাজার কৃষকের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে। ৪২ টিরও বেশি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এই হাটসন অ্যাগ্রো।
চন্দ্রমোগান শুধু টাকা রোজগারের কথা ভেবে ব্যবসা করেন নি। সেই কারণেই হয়ত তাঁর ব্যবসা মানুষের এত প্রিয়, এত সফল হয়ে উঠতে পেরেছিল। কারণ, শহরের পাশাপাশি তিনি তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্ৰামগুলিতে ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করা শুরু করেছিলেন। তাঁর স্লোগান ছিল ”Fresh Icecream from Madras“। সেইসময় গ্ৰামের মানুষের কাছে মাদ্রাজের মতো বড় শহরের খাবারের স্বাদ পাওয়া ছিল অত্যাশ্চর্যের বিষয়। ফলে তাঁর আইসক্রিমের প্রতি আকর্ষণবোধ করা ছিল স্বাভাবিক।
Discussion about this post