বর্তমানে আপামর বাঙালির ঘরে ঘরে ঈদে বেজে ওঠে ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। এ গান আজ ঈদের জাতীয় সঙ্গীত। তবে গানের জন্মলগ্ন ছিল একপ্রকার অনিশ্চিত। জোরাজুরি ছাড়া তৈরিই হত না একটা গোটা জাতির খুশির ঈদের এই গান।
১৯৩১ সাল, কলকাতা। কাজী নজরুল ইসলামের সুরে আর শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের গায়কিতে দুজনেরই জনপ্রিয়তা শিখরে পৌঁছেছে। অন্যদিকে উর্দু কাওয়ালি গানও রেকর্ড সমান বিক্রি হচ্ছে। শিকড়ের টানেই বোধ হয় আব্বাসউদ্দীন গলায় হতাশার সুর নিয়ে আবদার করলেন স্বয়ং নজরুলের কাছে। কাওয়ালি, শ্যামা সঙ্গীতের মতো বাংলা ভাষায় ঈদের গান যদি একটা বানানো যেত! তৎকালীন এইচএমভি গ্রামোফোন কোম্পানির ইনচার্জ ভগবতী ভট্টাচার্য। সেখান থেকেই মুক্তি পাচ্ছে নজরুলের রচিত শ্যামা সঙ্গীত। বাংলায় তখন এ গানের জয়জয়কার। এমন সময় পরীক্ষামূলক ভাবে গান বার করতে বেঁকে বসলেন খোদ ভগবতী বাবু। নজরুলও পড়লেন দোটানায়। ‘ইসলামের’ সাথে তাঁর কত আবেগ, অনুভূতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু শ্রোতের বিপরীতে গিয়ে বাংলাভাষায় ঈদের গান বাঁধার আর্থিক ঝুঁকির দিকটিও ছিল প্রবল। সাথে ছিল গানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয়।
আপাতভাবে তালা পড়লো আব্বাসউদ্দীনের মনস্কামনায়। মাঝে কেটে গেল ছ’মাস। কার্যতই এক শুভ দিনে নজরুল ও ভগবতী বাবু দুজনকেই পাওয়া গেল খোশ মেজাজে। আব্বাসউদ্দীন আবার পাড়লেন সেই গানের কথা। এত জনপ্রিয় শিল্পীর কথা আর ফেরানো যায় নি সেদিন। রাজি করা গেল। গান বের হবে। এরপর কয়েক কাপ চা, এক ঠোঙা পান ও আধ ঘন্টা সময় সহযোগে কাজী নজরুলের শিল্পী কলমে প্রাণ পেল এই বিখ্যাত গান ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। পরদিনই তাতে লাগলো সুর। চার দিন পর শেষ হল গান রেকর্ডিংয়ের কাজ। সেবারই ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছিল এই গানটি।
গানের কপি রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হল। সব ছাপিয়ে গেল মাতৃভাষায় ঈদের গানের সাফল্যের বিষয়টি। আবেগে বিহ্ববল শোনালো নজরুলের গলা। পরে এই গানটি আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার মাধ্যম। বাংলায় মুসলিমদের মধ্যে শুরু হল সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা, শোনা ও চর্চা। নজরুলই তার সূচনা করেছেন। গানের সরল ভাষা ও সহজ সুরের জাদুকাঠি অমর করে রাখল এই গানকে। চাঁদ দেখার মুহুর্তকে জীবিত করে প্রতি ঈদে আজও বাজে এই গান।
Discussion about this post