ফেব্রুয়ারি মাস মানেই ভালোবাসার মাস। কথায় বলে, ভালোবাসার কোন দিন হয় না। তবুও ৭-১৪ ই ফেব্রুয়ারী এই ৭ দিনের জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন প্রেমিক যুগলেরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র সূচনা হয় ৭ ফেব্রুয়ারি গোলাপ দিবসের মাধ্যমে। কিন্তু বছরের অন্য আরো একটি দিন ও গোলাপ দিবস হিসেবে পরিচিত, যা ২২শে সেপ্টেম্বর, বিশ্ব গোলাপ দিবস। কিন্তু বাস্তবে গোলাপ ফুলের সে রকম কোনও যোগাযোগ কিন্তু নেই দিনটির সাথে। আসলে এই দিনটি উৎসর্গ করা হয় মেলিন্ডা রোজের স্মৃতির উদ্দেশ্যে।
১২ বছরের মেলিন্ডা তার পরিবারের সাথে কানাডায় থাকতেন। কানাডার অর্থনৈতিক স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম হয় মেলিন্ডার। আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই বেশ চনমনে হাসিখুশি ছিল মেলিন্ডাও। সে ছিল মা-বাবার বড় আদরের। কিন্তু তাদের এই খুশির সময় আর বেশি দিন থাকল না। সময়টা ছিল ১৯৯২ সাল। মাত্র ১২ বছর বয়সে মেলিন্ডার ধরা পড়ল ব্লাড ক্যান্সার। জানা গেল অ্যাসকিনস্ টিউমার নামে এক বিরল ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত মেলিন্ডা। কিন্তু বিরল এই ব্যাধি বাঁধতে পারল না মেলিন্ডার অদম্য ইচ্ছেশক্তিকে।
শারীরিক কষ্ট ভুলে থাকতে সে গল্প, কবিতা, চিঠিপত্র এবং তার দৈনন্দিন ডায়েরি লেখার দিকে মন দিল। তার লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল, লেখার বেশিরভাগই ক্যান্সার রোগীদের উদ্দেশ্যে। কাছাকাছি বা দূরে, পরিচিত হোক বা অপরিচিত, সে যত জন ক্যান্সার রোগীর খবর পেয়েছে, তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য মাত্র ক্রমাগত চলেছে তার কলম। তার লেখা বহু সংখ্যক ক্যান্সার রোগীদের মানসিক দৃঢ়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অবশেষে সমস্ত লড়াইয়ের শেষে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মেলিন্ডা পাড়ি দেয় না ফেরার দেশে।
ছোট্ট মেলিন্ডাকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন তার মা-বাবা। কিন্তু তার পরেও তারা হারাতে দেননি মেলিন্ডার সমাজ গঠনের স্বপ্নকে, ভুলে যাননি তাদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাকে। তারা প্রতিবছর মেলিন্ডার জন্মদিন অর্থাৎ ২২শে সেপ্টেম্বর এলাকার ক্যান্সার রোগীদের আরোগ্য ও শুভকামনায় তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য মেলিন্ডার বাবা-মা তাদের হাতে তুলে দিতে লাগল হাতে তৈরি করা কার্ডসহ গোলাপ। সময়ের সাথে সাথে এই মানবিক উদ্যোগ এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলেকে ছাপিয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে লাগল।
ধীরে ধীরে সারাবিশ্বের দরবারে ২২শে সেপ্টেম্বর দিনটি ‘ক্যান্সার রোগীদের শুভকামনা দিবস’ ও ‘বিশ্ব গোলাপ দিবস’ হিসাবে পালন হতে শুরু হয়। বিচিত্র অসমসাহসী রোজকে কুর্নিশ জানাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে ক্যান্সারের ভয়াবহতা ক্রমশ বেড়েছে। তাই শুধু একটা দিনই নয় বছরের প্রতিটি দিন ক্যান্সার রোগীদের পাশে থেকে তাদের মনোবল বৃদ্ধি প্রয়োজন। এছাড়াও বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ যেভাবে বেড়ে চলেছে তা সামাল দিতে ক্যান্সার আক্রান্ত পবিবারের নাজেহাল অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে থেকে বেড়িয়ে আসতে সরকারি সহযোগিতা ও পদক্ষেপ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
Discussion about this post