পুরান ঢাকাসহ রাজধানী মিরপুর, গুলশান এবং বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা ও জেলা শহরের খাবার দোকানগুলিতে সাজ সাজ রব। কারণ? এসে গেছে পবিত্র শবে বরাতের সময়। শুরু হয়ে গেছে বিভিন্নরকমের রুটি বানানোর কাজ। আর সঙ্গে রয়েছে সুস্বাদু হালুয়া। মানুষ কেউ কেউ বাড়িতেই বানাবেন রুটি-হালুয়ার এই ঐতিহ্যশালী ‘কম্বো’ আর বাকিদের কাছে রুটির দোকানই ভরসা। মোট কথা রুটি-হালুয়া ছাড়া শবে বরাত উদযাপন ভাবাই যায়না।
‘লাইলাতুল বরাত’ বা ‘শবে বরাতে’র অর্থ হল ‘সৌভাগ্যের রাত’। ইসলাম ধর্মের মানুষেরা এই নির্দিষ্ট রাত্রিটিকে বিশেষ পবিত্র রাত্রি বলে মনে করে থাকেন। বাংলাদেশে এই শবে বরাত পালনের দিনটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে হালুয়া-রুটি তৈরির সংস্কৃতি। শুধু তৈরি নয়, আত্মীয় বা পড়শির মধ্যে তা বিতরণ করাও এই সংস্কৃতির অঙ্গ। অথচ, এই সম্পর্কে ইসলাম ধর্মে কোন নির্দিষ্ট নির্দেশ নেই। বাংলাদেশে ঘটা করে শবে বরাত পালনের প্রচলন হয়েছিল উনিশ শতকের শেষের দিকে। ঢাকার নবাবরা খাবার ও আলোকসজ্জার বড় আয়োজন করতেন। সেই সময় মিষ্টির দোকান বিশেষ ছিল না। ফলে মিষ্টি খাবারের উপাদান দিয়ে বাড়িতেই হালুয়া তৈরির প্রচলন শুরু হয়।
আর বাংলাদেশের অনেকে বিশ্বাস করেন তাঁদের মহানবীর দাঁত খারাপ থাকায় তিনি নাকি এক সময় শক্ত খাবার খেতে পারতেন না। তখন তাঁকে নরম রুটি আর মিষ্টি হালুয়া বানিয়ে দেওয়া হত। এই ঘটনার রেশ ধরেই নাকি শবে বরাতের দিন রুটি আর হালুয়া বানিয়ে খাওয়া হয়। আবার অনেকে মনে করেন রাজনৈতিকভাবে নবাবদের আধিপত্য, ইসলাম ধর্মের আধিপত্যের কারণেই রুটি খাওয়ার প্রচলন বাংলায় শুরু হয়েছিল। তাই শবে বরাতকে সুন্দরভাবে পালন করার জন্য রুটি-হালুয়ার প্রচলন হয়েছে। আর আনন্দ ভাগ করে নেবার ধারণা থেকে এসেছে খাবার বিতরণের বিষয়টি।
শবে বরাতের আগের রাত থেকে থেকেই রুটির পসরা বসে পুরান ঢাকার অলিগলিতে। এমনিতেই পুরান ঢাকার অলিগলি প্রাচীন খাবারের দোকানের জন্য বিখ্যাত। তাই, শবে বরাতের রুটি-হালুয়া সেখানে মিলবে না, এতো হতে পারে না। ফলে শবে বরাতের সময়, প্রতিবছরই কেজি দরে রুটি কিনে নেন খদ্দেররা। বর্তমানে শবে বরাত একটি বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে। রুটি আর হালুয়া খাওয়ার পিছনে যে কারণ, বা যে ইতিহাসই থাকুক না কেন, মানুষ সেসব নিয়ে ভাবার বদলে আনন্দ উদযাপন করতেই ভালোবাসেন।
Discussion about this post