স্কুল জীবনে বাংলায় নিশ্চয়ই পড়তে হয়েছে ‘প্রবাদ প্রবচন’ অধ্যায়। অবশ্য সিলেবাসের বাইরে থাকা প্রবাদের সংখ্যাও যে নিছক কম নয়। ‘চালাও পানসি বেলঘরিয়া’। শুনেছেন কি প্রবাদটা? আজ্ঞে হ্যাঁ, এই প্রবাদের পিছনেই যে লুকিয়ে বেলঘরিয়ার বেশ খানিক ইতিহাস। কলকাতার বাইরে আড়িয়াদহ, দমদম, বরাহনগর এসব এলাকায় গজিয়ে উঠেছিল প্রচুর বাগান বাড়ি। মফ:স্বল এলাকা বেলঘরিয়াও তার ব্যতিক্রম ছিল না। মূলতঃ কলকাতার জমিদার শ্রেণীই নিজেদের বাড়ি থেকে দূরে বাগান বাড়ি বানিয়ে রাখতেন। জমিদাররা কলকাতা থেকে পানসী (এক ধরণের ডোঙা) করে গঙ্গা হয়ে দেঁতে খাল ধরে বেলঘরিয়ার বাগানবাড়িতে আসতেন। তাদের আনন্দ, উল্লাসের আমেজই অমর হয়ে রয়েছে এই ‘চালাও পানসী বেলঘরিয়া’ প্রবাদে।
আরও পড়ুন এককালের কর্মব্যস্ত রাণী রাসমণির কাছারি বাড়ি! গুনছে নিস্তব্ধ বার্ধক্যের দিন
লোকমুখে শোনা যায়, প্রধান বাগান বাড়িগুলি ছিল নীলগঞ্জ রোডের আশেপাশেই, দেঁতে খালকে ঘিরে। স্টেট ট্রান্সপোর্ট অফিসের জায়গায় এক সময় ছিল মস্ত এক বাগানবাড়ি। তাছাড়াও এখন যেখানে জেনিথ হাসপাতাল, সেখানে ছিল এক বিরাট, জাঁকজমকপূর্ণ বাগানবাড়ি। সেই বাগানবাড়ির নাচঘরে এক কাঠের পাটাতনের নীচে, জলের ওপর তার লাগানো থাকতো। বাঈজীদের নাচের সময় জলতরঙ্গ বেজে উঠতো। বর্তমান দু’নম্বর রেলগেটের পাশে ওল্ড নিমতা রোডের ওপর ছিল রেমিশনের বাগানবাড়ি। এছাড়াও বাসুদেবপুরের ‘মনোভিলা’ এলাকায় একসময় ছিল মনোরমা বাইজীর বাগানবাড়ি। বেলঘরিয়া থানা এলাকাতেও ছিল একটি বাগানবাড়ি। আবার হাল আমলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘রাইস’ এর উল্টোদিকেই ছিল কালীদাস পালের বাগান বাড়ি। তার সামনেই দাঁড়িয়ে রাধা কৃষ্ণের মন্দির।
আরও পড়ুন ঠেলাগাড়িতেই ভবিষ্যৎ খুঁজছেন তিলোত্তমার চার বাঙালি উচ্চশিক্ষিত তরুণ!
এখানকার পুরনো মানুষদের থেকেই শোনা, বাইরের লোকের চোখে ধুলো দিতেই নাকি এই মন্দির বানানো হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হলো বাগানবাড়ি এবং তার কাহিনী ইতিহাসের পাতার স্পষ্ট ভাবে দেওয়া নেই। এ সমস্ত কার্যকলাপ মানুষের জীবনের গোপন দিক হওয়ায়, ইতিহাসবিদরা তা এড়িয়ে গিয়েছেন সযত্নেই। ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে সেই সাতকাহন।
Discussion about this post