মাধব দামলে একজন অতি সাধারণ মানুষ, তবে তাঁর ভাবনার অসাধারণতায় বদলে গেছে বহু মানুষের জীবন। বয়সের ভারে ক্লান্ত, নিঃসঙ্গ জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা অবিবাহিত কিংবা বিধবা কিংবা বিপত্নীক প্রবীণদের পাশে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছেন তিনি। একটি ছোট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর এই পথচলা—”বয়স হলে কি ভালোবাসা, সঙ্গ বা সম্পর্কের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়?”
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই পুনের বাসিন্দা মাধব প্রবীণ নাগরিকদের জন্য জীবনসঙ্গী খোঁজার পথ বাতলে দিচ্ছেন। সামাজিক মানসিকতা ও সংস্কারের বাধা তিনি ভেঙে ফেলেছেন ।মাধব দামলে একজন প্রাক্তন সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার। তিনি প্রবীণদের নিঃসঙ্গতা দূর করতে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘হ্যাপি সিনিয়র্স’ নামের অভিনব এক ম্যাচমেকিং সংস্থা। এই সংস্থার মাধ্যমে তিনি ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে অবিবাহিত, বিধবা বা বিপত্নীক প্রবীণদের জন্য জীবনসঙ্গী খুঁজে দেওয়ার কাজ করেন। তাঁর উদ্যোগের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত ৮১ জন প্রবীণ নতুন সঙ্গী পেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছেন।
মাধবের মতে, মানুষের হৃদয়ের চাহিদা বয়স দেখে কমে না বা বাড়ে না। ভালোবাসা, বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব এসবের প্রয়োজন শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকে। তাঁর এই পদক্ষেপ প্রবীণদের শুধু একটি জীবনসঙ্গীই দেয়নি, বরং দিয়েছে জীবনের প্রতি নতুন আশা। সমাজের চোখে যে মানুষগুলো ছিলেন ‘বাকি জীবন একা থাকার নিয়তি বরণ করা মানুষ’, মাধব তাদের জন্য খুলে দিয়েছেন ভালোবাসার নতুন জানালা। তাঁর ‘হ্যাপি সিনিয়র্স’ সদস্যদের জন্য মাসিক মিলনমেলা, পিকনিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রতিটি সদস্য আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এবং তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক পরিষ্কার। লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে, উভয় পক্ষের জন্য পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখা হয়, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা এড়ানো যায়।
এই উদ্যোগ শুধু পুনেতে নয়, ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে ভারতের অন্যান্য শহরেও। তাঁর কাজের অনুপ্রেরণায় অনেকে নিজেদের শহরে প্রবীণদের জন্য এমন সেবার কথা ভাবছেন। মাধবের এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। ২০১০ সালে, এক বৃদ্ধাশ্রমে এক প্রবীণ বাসিন্দা পারিবারিক অবহেলার কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এই ঘটনা মাধবকে প্রবীণদের মানসিক ও সামাজিক চাহিদা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। তিনি উপলব্ধি করেন, প্রবীণদের শুধু আশ্রয় নয়, সঙ্গেরও প্রয়োজন। এই উপলব্ধি থেকেই জন্ম নেয় ‘হ্যাপি সিনিয়র্স’।
Discussion about this post