একটা সময় ছিল যখন গ্রামের মেঠো পথে খুঁজে পাওয়া যেত ছাউনি ঘেরা ঘরে একান্নবর্তী পরিবারের জমাটি পরিবেশ। মাটির দেওয়াল জুড়ে থাকত ঘুঁটের নকশা। গ্রাম বললেই মনে তখন খেলত শান্তির ঠিকানা। টিনের বাক্স হাতে খুদেদের গ্রামের স্কুল যাওয়া। আবার পাড়ার মুদি দোকানে সাঁঝবেলায় আড্ডার ঠেক। কত গল্প গুজব, কত তামাশার আসর। কিন্তু গ্রাম ধীরে ধীরে নগরের ছোঁয়া পেতে শুরু করল। চালে খড় সরে বসল অ্যাসবেস্টাস। স্কুল ব্যাগের জাঁক-জমকে চোখ গেল পড়ুয়াদের। গ্রামের দোকানগুলোর সেই প্রাণবন্ত চেহারাও হারাল ক্রমশ। কিন্তু আজকের এই যন্ত্রসভ্যতার যুগে হঠাৎ যদি গ্রামের সেই কোমল স্পর্শটা পাওয়া যায়! অবাক হবেন তো? চলুন তবে সেখানেই নিয়ে যাই আপনাদের।
সুন্দরবনের দত্তা নদীর তীরে সাত জেলীয়া দ্বীপের শান্তিগাছি গ্রাম। সেখানেই রয়েছে খড়ের ছাওয়া আর বাঁশের লাঠি জোড়া এক ছোট্ট কুঁড়ে। এটি আসলে গ্রামের একটি মুদির দোকান। যেখানে রোজ পাড়ার মেয়ে বৌ-রা জমায়েত হয় তেল নুন কিনতে। আর পুরুষরা সারা দিনের খাটনি সেরে ফেরে দু’দন্ড জিরোতে। দোকানটি দেখলেই আপনার মনে হবে যেন টাইম মেশিনে চড়ে পৌঁছে গিয়েছেন সেই অতীতের দিনে। অচিরেই প্রাণভরে এক তৃপ্তির নিঃশ্বাসও নিয়ে ফেলবেন। তবে গ্রামবাসীরা এটিকে মুদির দোকান না বলেন না। চলতি ভাষায় এটি ভুষিমালের দোকান।
সত্যি বলতে হাল আমলের শপিং মলের মধ্যে চাকচিক্য, গ্ল্যামার আলবাৎ পাবেন। তবে পাবেন না জৌলুসহীন আলাপচারিতার সান্নিধ্য। এই অনাড়ম্বর মুদির দোকানের মধ্যেই যে পাঁচ মেশালি গন্ধটা লেগে রয়েছে আপনার সেটিতে মন মজতে বাধ্য। এই শতকেও এমন সারল্যময় গ্রাম্য জীবন টিকিয়ে রাখা সত্যি সুন্দরবনের পক্ষেই সম্ভব।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – প্রবীর দীপু
Discussion about this post