ছোটোবেলায় আমরা প্রায় অনেকেই শুনেছি গামা পালোয়ানের কথা। বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের বইয়েও প্রায়ই শোনা যেত এই নাম। বিখ্যাত এই কুস্তিগীরের আসল নাম ছিল গোলাম মোহাম্মদ বকশ বাট। তবে তিনি ভারতে পরিচিত ছিলেন ‘গামা পেহেলওয়ান’ নামেই। শুধু নামেই পালোয়ান নন, বিশ্ব কুস্তি হোক বা ভারতীয় কুস্তির মঞ্চ–এসব কিছুই ছিল তাঁর কাছে নস্যি। তাঁর দীর্ঘ ৮২ বছরের জীবনে তিনি প্রায় ৫০০০টি ম্যাচ লড়েছেন। যার মধ্যে একটি ম্যাচেতেও তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ধোপে টেকেনি। তাই ব্রিটিশ আমলে ভারতের বিখ্যাত গামা পালোয়ান তকমা পেয়েছিলেন ‘আনডিফিটেড চ্যাম্পিয়ন’-এর।
উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। গায়ে ছিল দশ হাতির শক্তি। তাঁর থেকেও বেশি উচ্চতা এবং ওজনের রেসলারদের একাই কুপোকাত করতে পারতেন নিমেষে। জানা যায়, একবার নাকি গুজরাটের এক ক্রীড়াপ্রেমী রাজাকে নিজের শক্তি দেখাবেন বলে প্রায় ১২০০ কেজি ওজনের একটি পাথর তুলে ছুড়ে ফেলেছিলেন তিনি। প্রতিদিন ১০ লিটার দুধ পান করতেন। সেই সঙ্গে ৬টি দেশি মুরগি, ১০০টি রুটি এবং প্রায় ২০০ গ্রাম বাদাম দিয়ে তৈরি একটি পানীয়ও রাখতেন খাদ্য তালিকায়। বিখ্যাত মার্শাল আর্টিস্ট ও চিনা অভিনেতা ব্রুস লি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন ভারতীয় এই রেসলারের কাছ থেকে।
১৯১০ সালের দিকে ভারতের সকল বড় রেসলারদের হারিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। সেখানেও অবশ্য তাবড় তাবড় রেসলাররা ভয় পেতেন তাঁর অবিশ্বাস্য ও অদম্য এই শক্তিকে। ১৯১০ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ১৯২৭ সালে ওয়ার্ল্ড রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপ সহ বেশ কয়েকটি শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। দেশভাগের পর অবশ্য তিনি পাকিস্তান চলে যান। সেইসময় তিনি অনেক হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে রক্ষা করেছিলেন নিজ দায়িত্বে।
এত সাফল্যের মাঝেও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল কষ্টে ভরা। তার ৫ জন পুত্রের সবাই ছোটবেলায় মারা যায়। একসময় ইংল্যান্ড আমেরিকা কাঁপিয়ে বেড়ালেও শেষ বয়সে অর্থাভাবে কাটাতে হয়েছে। সরকার অবশ্য কিছু জমি দিয়েছিল এবং সাথে মাসিক পেনশনের টাকাতেই দিন চলত তাঁর। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের লাহোরে ৮২ বছর বয়সে মৃত্যু ঘটে ভারতীয় বিখ্যাত বীর পালোয়ান ‘দ্য গ্রেট গামা’র।
Discussion about this post