দোল বাঙালির রঙের উৎসব। ছোট থেকে বড় বয়সের বেড়াজাল কাটিয়ে সবাই মেতে ওঠেন এই রঙিন উৎসবে। কিন্তু এই দোলকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু জায়গায় ফুটে ওঠে সমাজের এক বর্বর চিত্র। কোথাও জোর করে রঙ মাখানো বা কোথাও নেশা করে অসভ্যতার অভিযোগের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। তবে কোথাও যেন বর্তমান সমাজে ঘাটতি পড়েছে পর্তুগীজ নায়েব জনের মত সাহসের। যার লাঠির ভয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলেন ভারতীয় মহিলাদের সাথে অসভ্যতা করা ইংরেজরা।
সময়টা ষোল শতকের শেষদিক। তৎকালীন সময়ে সাবর্ণ রাজপরিবারের গৃহদেবতা শ্যামরায়কে কেন্দ্র করেই দোল উৎসবে মেতে উঠতো সারা কলকাতা। সেইসময় কলকাতায় শ্যামরায় মন্দিরে আসতেন রাজ পরিবারের সকল সদস্য ও সকল সাধারণ মানুষ। শ্যামরায়কে মঞ্চে রেখে রাজা-প্রজা সকলে নাচ-গান করতেন। উড়ন্ত আবিরে পরিবেশ লাল হয়ে যেত। এরকমই এক দোলের দিন দেখা যায়, জব চার্নকের কিছু ইংরেজ সৈন্যকে উৎসবে ঢুকে মহিলাদের সাথে অসভ্য আচরণ করার চেষ্টা করতে। ইংরেজ সৈন্যদের এই আচরণে ক্ষুব্ধ উপস্থিত সকল মানুষ সম্মিলিতভাবে ইংরেজ সৈন্যদের বাধা দেয়। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে ইংরেজ সৈন্যরা অপেক্ষা করতে থাকে প্রতিশোধের। রং খেলা শেষ হলে যখন সকল নারীরা স্নান করতে যান লালদীঘিতে। ঠিক তখনই ইংরেজ সৈন্যরা তাদের দেখে অশালীন মন্তব্য করতে থাকেন। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ইংরেজরা সেখান থেকে যান না।
ঠিক সেই সময়ে ইংরেজদের এই অসভ্যতা দেখে পর্তুগিজ নায়েব জন নিজে লাঠি হাতে কিছু ছেলেকে নিয়ে এগিয়ে আসেন প্রতিবাদ করতে। নায়েব জন ছিলেন অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির মাতামহ। তিনি অত্যন্ত ভালো লাঠি খেলা জানতেন। তিনি নিজে একজন খ্রিষ্টান হলেও শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন তার আরাধ্য। তিনি সাবর্ণদের রাজকর্মচারী ছিলেন। প্রতিবার তিনি দোল উৎসবে নিজে হাতে খোল করতাল নিয়ে কীর্তন করতেন এবং আবিরে রঙিন হতেন। তাঁর নেতৃত্বে অতি অল্প সময়ে ইংরেজরা বেধরক মার খেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। তারপর কেটে গেছে ৩০০ বছরেরও বেশি সময়। আজও সাবর্ণ পরিবারের সাথে ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে অ্যান্টনির বীরত্বের কাহিনী।
রঙ নিয়ে খেলা একটি ঐচ্ছিক বিষয়। আপনার অনিচ্ছেতে আপনাকে স্পর্শ করে জোর করে রং মাখানো মোটেই সাধারণ ঘটনা নয়। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই জঘন্য কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায় এবং দোষীদের শাস্তির ব্যাবস্থা করা যায়। ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৫৪, ৩৫৪ বি, ২৯৪ এবং ৩০৪/৩৪ ধারায় মামলা করা যায়। এছাড়াও এই অপরাধ রুখতে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – সুরথ চক্রবর্তী
Discussion about this post