পাশা খেলায় হেরে যাওয়ায়, পাণ্ডবেরা বারো বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসে গিয়েছিলেন সে তো সকলেরই জানা। এক বছর অজ্ঞাতবাসের সময় পঞ্চপাণ্ডব সহ দ্রৌপদী বিরাট রাজার দরবারে ছদ্মবেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী, অধুনা মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র সাত কিমি দূরে অবস্থিত গোপগড় ছিল বিরাট রাজার গোশালা। যদিও এ নিয়ে মতভেদ আছে। শত মতভেদের মধ্যেও গোপগড়ে, একটি প্রাচীন ভগ্নপ্রায় হেরিটেজ বিল্ডিং আজও বর্তমান। এই বিল্ডিংটি ও তার সংলগ্ন অঞ্চল বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও বনবিভাগের দ্বারা সংরক্ষিত।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও বন দফতরের যৌথ উদ্যোগে এখানে গড়ে উঠেছে জেলার সর্ব বৃহৎ ইকো পার্ক, ‘গোপগড় হেরিটেজ এন্ড নেচার ইকো – ট্যুরিজম সেন্টার’। এর প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি মাত্র ১০ টাকা। পার্কিংয়েরও সুবন্দোবস্ত আছে এখানে। ছোটো গাড়ির জন্য ৪০ টাকা ও বড় গাড়ির জন্য ৮০ টাকা বরাদ্দ। ক্যামেরা ফটোগ্রাফির জন্যও আছে নির্ধারিত রেট। খোলা আকাশের নিচে পিকনিক করার জন্য আপনাকে স্পট বুকিং করতে হবে। যার মূল্য ২৫০ টাকা। আর শেড নিতে চাইলে দক্ষিণা ৪০০ টাকা।
পছন্দমতো স্পট বুকিং ও গাড়ি পার্কিং করে ভেতরের দিকে এগোলে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছের দল আপনার গাড়িতে আসার ক্লান্তিকে নিমেষে ভুলিয়ে দেবে। প্রবেশদ্বারের দুধারে আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে সশস্ত্র দুই প্রহরী। পার্কের গোলাপ বাগান, বাগানবিলাসের ঝাড়,শীতকালীন মরসুমী রং-বেরঙের ফুল আপনার নয়নাভিরাম করার জন্য যথেষ্ট। বাচ্চাদের খেলার জন্য রয়েছে সুন্দর সাজানো শিশু উদ্যান। পার্কের ঠিক মাঝে বনদপ্তরের ১৫০ বছর পূর্তির স্মরণে গড়ে তোলা সুউচ্চ একটি ক্লক টাওয়ার বিদ্যমান। পিকনিক করার জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম ও রান্না করা খাবারের প্রয়োজন হলে পার্কের মধ্যে থাকা ফুড প্লাজার অধিকর্তা সঞ্জীব জানা ওরফে রাম বাবুর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। শাল, সেগুন, সোনাঝুরিকে সঙ্গী করে উচুঁ নিচু টিলা পেরিয়ে ট্রেকিং করলে দেখতে পারেন ‘গ্রেট ট্রিগনামেট্রিক স্টেশন’। যার উচ্চতা ২১১ ফিট। মনে করা হয় এটিই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে উঁচু স্থান।
পিকনিক শেষে পড়ন্ত বিকেলে ওয়াচ টাওয়ার থেকে কংসাবতী নদী ও নদীর ওপরে রেল সেতুতে ট্রেনের আনাগোনা সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অপরূপ সৌন্দর্য ক্যামেরা বন্দী করার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। রাত্রি যাপনের জন্য ‘পথিক’ ও ‘প্রিয়া’ নামে দুটি কটেজ এবং একটি ডরমেটরি উপলব্ধ আছে গোপগড়ে। রেলপথে আসতে হলে, হাওড়া থেকে মেদিনীপুরগামী যে কোনো ট্রেনে মেদিনীপুর চলে আসুন। স্টেশন থেকে মাত্র ১০০-১৫০ টাকার বিনিময়ে একটি টোটো ভাড়া করে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার গন্তব্যস্থল, গোপগড়।
Discussion about this post