দ্য টক্সিক লেডি’ বা ‘বিষাক্ত মহিলা’। শব্দগুলি অচেনা লাগলেও নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে আমেরিকার প্রতিটি খবরের কাগজের পাতায় পাতায় উঠে এসেছিল এই মহিলার কাহিনী। সময়টা ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাস। আমেরিকার দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড হাসপাতালে হাজির হলেন ক্যান্সারে আক্রান্ত এক তরুণী। নাম গ্লোরিয়া রামিরেজ। বয়স সবে একত্রিশ ছুঁয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছিল তাঁর। হঠাৎই শ্বাসকষ্ট সমস্যা হওয়ায় হাসপাতালে আসেন তিনি। অবস্থা শোচনীয় থাকায় তাড়াতাড়ি তাঁকে এমারজেন্সি ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে রক্ত পরীক্ষার তোড়জোড় শুরু করে দেওয়া হল। ঠিক সেসময়ই ঘটে গেল এক অদ্ভুত ঘটনা। তরুণীর রক্ত সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পরে তারা জ্ঞানও হারায়। কিন্তু এই আশ্চর্য ঘটনার কারণ ঠিক কী ছিল? তা জানতে ফিরে যেতে হবে সেই রাতে।
অসুস্থ গ্লোরিয়াকে এমারজেন্সি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার সময়ই চিকিৎসকরা লক্ষ্য করেন তাঁর নিশ্বাস আর সাধারণ মানুষের মত নয়। বরং খানিকটা ঝাঁঝালো কেমিক্যালের মত। তাঁর চামড়ার রঙও সাধারণের থেকে আলাদা। তা দেখেই রক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দেন উপস্থিত চিকিৎসকরা। কিন্তু ঠিক তখনই সেই আশ্চর্য ঘটনাটি ঘটে। রক্ত নেওয়ার সময় তা থেকেও কেমিক্যালের মত ঝাঁঝালো গন্ধ স্বাস্থ্যকর্মীদের নাকে আসে। এমনকি রক্তের মধ্যে অদ্ভুত ধরণের কণাও লক্ষ্য করেন তাঁরা। ঠিক তারপরই তাঁরা জ্ঞান হারান। এখানেই শেষ নয়। সেই রাতে গ্লোরিয়ার কাছে যারাই যান তারাই এভাবে জ্ঞান হারাতে থাকেন। হাসপাতালে কর্মরত মোট ২৩ জন কর্মী এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক একজনকে তো বেশ কিছুদিন সেই হাসপাতালেই ভর্তি থাকতে হয়েছিল। এই খবর সারা আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। খবরের কাগজ জুড়ে ছাপা হয় এই ঘটনা। রাতারাতি গ্লোরিয়ার নাম বদলে হয়ে যায় ‘দ্য টক্সিক লেডি’ বা ‘বিষাক্ত মহিলা’।
এসবের মধ্যে সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েন গ্লোরিয়া। যেহেতু কেউ তাঁর কাছে যেতে পারছিলেন না তাই একপ্রকার বিনা চিকিৎসাতেই পড়ে থাকলেন তিনি। ফলতঃ শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটে সেই রাতেই মারা গেলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ ঘিরে চলে নানা পরীক্ষা-নিরিক্ষা। গবেষণায় উঠে আসে নানা তথ্য। চিকিৎসকরা অনুমান করেন দীর্ঘদিন ধরে গ্লোরিয়া যে ওষুধ খেতেন, তার মধ্যে ডাইমিথাইল সালফক্সাইডের পরিমাণ ছিল খুব বেশি। এটি তাঁর শরীরে প্রবেশ করে বিষক্রিয়া ঘটিয়েছিল। ঠিক সেই কারণেই তাঁর নিশ্বাস বা রক্ত থেকে ঝাঁঝালো গন্ধটি পাওয়া গেছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বিষক্রিয়াটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। তাই হাসপাতালে আসার পরই মারা যান গ্লোরিয়া। সমস্ত পরীক্ষা শেষে মারা যাওয়ার ১০ দিন পর অলিভউড মেমোরিয়াল পার্কে গ্লোরিয়াকে কবর দেওয়া হয়েছিল। সেসময় সংবাদ মাধ্যমে বেশ ফলাও করেই ছাপা হয়েছিল এই ‘টক্সিক লেডি’র কথা। কোনও হলিউড মুভির থেকে কোনও অংশে কম ছিল না গ্লোরিয়ার এই কাহিনী। আজও নব্বইয়ের দশকের আমেরিকার খবরের কাগজগুলি ঘাঁটলে ‘টক্সিক লেডি’র কাহিনী উঠে আসবে পাতায় পাতায়।
Discussion about this post