সুকান্ত ভট্টাচার্যের “আঠারো বছর বয়স” কবিতাটি পড়েছেন নিশ্চয়ই। যাদের শরীর জুড়ে ফুটন্ত রক্তের প্রবাহ আর হাতে অসীম কর্মদক্ষতার জোর। QSYN অর্থাৎ কোয়ারেন্টাইনড স্টুডেন্ট ইউথ নেটওয়ার্ক হল তেমনই এক স্বাধীন চেতা ছাত্রছাত্রীদের স্বতন্ত্র উদ্যোগ। বয়সটি যদিও তাঁদের আঠারো বছরের ঊর্ধ্বেই। তাঁদের গায়ে না লেগেছে কোনো রাজনৈতিক স্ট্যাম্প আর না রয়েছে চশমা আঁটা কোনো সভাপতির খবরদারি। গাল ভরা ভাষণ দেওয়া কোনো সংগঠনও নয় এনারা। সাধারণের পাশে থাকা কিছু সাধারণ ছাত্র-যুব তাঁরা। গত বছর লকডাউন থেকেই পাকাপাকিভাবে তাঁরা নামেন রাস্তায়। সময় অসময়ে দাঁড়িয়ে যান খেটে খাওয়া মানুষদের সঙ্গে গল্প করতে। তাঁদের যাবতীয় দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে সেইমতো পৌঁছে যান সাহায্যের ঝুলি হাতে। ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত মানুষের পাশে থাকতে এমন এক কর্মসূচির খসড়া বানিয়েছেন তাঁরা যাতে রীতিমতো তাজ্জব নেটদুনিয়ার মানুষ।
১৪ টি দেশের ৯৫ জন নামজাদা শিল্পীরা লাইভে আসবেন এই QSYN এর হাত ধরে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মুম্বইয়ের অনুরাগ বাসু, সুজিত সরকার, শান্তনু মৈত্র, বাংলার মহীনের ঘোড়াগুলির শিল্পী এবং আরও বহু জনপ্রিয় শিল্পীরা। এমনকি বিদেশী শিল্পীরাও সাড়া দিয়েছেন এই ডাকে। ২৯ ও ৩০ মে সকাল পৌনে ৯ টা থেকে রাত ১২টা অবধি চলবে এই অনলাইন পর্বটি। নাচ, গান, আলাপ, আলোচনা সবকিছুই হবে ওই দু’দিন ধরে। না, কোনো উৎসবের জলসা নয়। উদ্দেশ্য হল সোশ্যাল মিডিয়ায় সাংস্কৃতিক জমায়েতের মাধ্যমে বিশেষ বার্তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। আর বার্তাটি হল “সামজিক দূরত্ব নয়, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।” আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোরই আবেদন থাকবে ‘গ্লোবাল সলিডারিটি উইকেন্ড’ নামের এই উদ্যোগে। QSYN -এর ফেসবুক স্ট্রিমিং এবং ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাবে অনুষ্ঠান।
বিগত বছরের লকডাউনে আটকা পড়া দিল্লীর বাঙালি পরিযায়ীরা QSYN-এর সৌজন্যে হাতে পেয়েছে রেশন। আম্ফানে বিধ্বস্ত বহু পরিবারের হাতে পৌঁছেছে ত্রিপলসহ বাড়ি তৈরীর সরঞ্জাম। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ‘পিপলস কিচেন’ খুলে সেজেছে খাবারের থালা। সুন্দরবনের মতো এলাকায় ৬০০ মতো পড়ুয়ার হাতে উঠেছে সোলার ল্যাম্প। ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন খাবার, ওষুধের প্যাকেট হাতে। এছাড়াও রয়েছে আইসোলেশন সেন্টারের ব্যবস্থা, ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পের আয়োজন। প্রস্তুতি চলছে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত অঞ্চলগুলোর দরজায় পৌঁছনোর। এই গোষ্ঠীর বিশিষ্ট সদস্যা নাদিয়া বলেন,”হাতে অর্থ ধরিয়ে দেওয়া সহজ। কিন্তু সশরীরে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের চাহিদা মতো সাহায্যই আমাদের কাজ। আমরা তাই ত্রাণকর্তা নই সাহায্যের হাত বাড়ানো সাধারণ।”
Discussion about this post