‘মেলা’ শব্দটির সঙ্গে গ্রামবাংলার প্রতিটি মানুষেরই এক অদম্য আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। তাই মেলার কথা শুনলেই বাঙালির মনে আনন্দের বাণ ডেকে যায়। আর সেই মেলা যদি বাংলাদেশের নববর্ষের মেলা হয় তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই! বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের পর যখন আবার প্রথম পার্বণটি অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ বাঙালির দোরগোড়ায় হাজির হয়। বাঙালি এবং বৈশাখী মেলা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সেরকমই একটি মেলা হল বাংলাদেশের সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া মেলা। পেরাব গ্রামের পাশে ধুমধাম করে আয়োজন করা হয়ে থাকে এই মেলাটির।
লোকমুখে প্রচলিত, জামিনী সাধক নামের এক ব্যক্তি ঘোড়ায় করে এসে নববর্ষের দিনে সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর এখানে তার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। তাই প্রতিবছর পয়লা বৈশাখের দিনে সেই স্মৃতিস্তম্ভে একটি করে মাটির ঘোড়া রেখে এই এলাকায় মেলার আয়োজন করেন। তাই লোকমুখে প্রচলিত মেলাটির নাম ঘোড়ামেলা ও এভাবেই শুরু হয় সোনারগাঁওয়ের আকর্ষণীয় ঘোড়া মেলার। মেলার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে নৌকায় খিচুড়ি রান্না করে মেলায় আসা সকল দর্শনার্থীদের খাওয়ানো। কলাপাতায় ভক্তি ভরে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলকে পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়। শুধুমাত্র স্থানীয় মানুষজন নয়, অনেক দূর দূর থেকেও হাজার হাজার দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে মেলায়।
একদিনের এই মেলাটি জমে ওঠে মূলত দুপুরের পর থেকে। মেলায় নাগরদোলা থেকে শুরু করে পুতুল নাচ এমনকি সার্কাসেরও আয়োজন করা হয়। এসব বাদেও বিভিন্ন লোকজ পণ্যের সমাহারও ঘটে এই মেলায়। সকাল থেকেই মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকেন মেলায় পা রাখার জন্য। নানারকম আনন্দ-উৎসবের পর পশ্চিমের আকাশ যখন রক্তিম আলোয় সজ্জিত হয়, তখনই এ মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ক্লান্তি দূর করার জন্য নতুন মাত্রায় সেখানে যোগ হয় কীর্তন। এই কীর্তন চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।
এভাবেই অবসান ঘটে নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া মেলার। আবার এই বার্ষিক মিলনোৎসবের অপেক্ষার দিন গোনা শুরু হয় দর্শনার্থীদের। বর্ষ শুরুর আনন্দে মুখরিত বাঙালিরা বছরের পর বছর মেলাটিকে এভাবেই সাফল্যমন্ডিত করে তুলুক সেটিই কাম্য!
Discussion about this post