হাসপাতাল শুনলেই বুকটা কেমন যেন ছ্যাৎ করে ওঠে। দুঃস্বপ্নেও বোধহয় কেউ পা রাখতে চান না ওই স্তব্ধতায় মোড়া গুমোট পরিবেশে। দমবন্ধ করা এক বদ্ধ বাতাবরণ। দেওয়াল জুড়ে দিবারাত্র জ্বলছে ফিনফিনে সাদা টিউবলাইট। করিডোর জুড়ে কিছু অপরিচিত মানুষের ভয়াতুর চেহারা। চারপাশে কেমন যেন ঔষধি গন্ধের মাতামাতি। গুরুগম্ভীর গতিতে চলা ডাক্তার কিংবা নার্স। আর ওই একফালা বেডে শুয়ে থাকা নিস্তেজ রুগী। সুস্থ মানুষই যেখানে পৌঁছে অসুস্থতা বোধ করেন সেখানে কি সত্যিই রুগীর সুস্থতার চর্চা চলে? চিরাচরিত এই জটিল প্রশ্নের সোজাসাপটা উত্তর দিতেই ১৯৪৫ সালে ধরাধামে জন্ম নিলেন প্যাচ অ্যাডামস।
ডাক্তারি মতে, রুগীর মন ভালো থাকলেই নাকি অর্ধেক রোগমুক্তি ঘটে। আর সেই সূত্র ধরেই ওয়াশিংটনের খ্যাতনামা এম.ডি(ডক্টর অফ মেডিসিন) প্যাচ অ্যাডামাস ওষুধের বিকল্প পথ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৭১ সালে ২০ জন ডাক্তারকে নিয়ে তিনি একজোট হলেন। পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় চালু করলেন কল্পনার জলরঙে আঁকা এক হাসপাতাল। যেখানে ডাক্তার ও রোগী এক ছাদের তলায় বসে মেতে ওঠেন বন্ধুসুলভ হাসিঠাট্টায়। চিকিৎসার জন্য যেখানে একটা টাকাও লাগে না অসহায় নিম্নবিত্ত রুগীদের। সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক থেকে ঝাড়ুদার সব্বার মাইনে এক। ডাক্তারের প্রতি যেখানে অগাধ বিশ্বাস রয়েছে রোগী ও তার আত্মীয়স্বজনের। প্রতি রুগীকে ৩-৪ ঘন্টা অন্তর নজরে রেখে চলে সুস্থ করার প্রচেষ্টা। যৎসামান্য ওষুধের বিনিময়ে যেখানে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় যাতে রোগী হেসেখেলে অনায়াসে আরোগ্য পায়। কিন্তু এই পদ্ধতিকে সেবার ভিত করতে গিয়ে গাজেনঢাইট হাসপাতালের আর্থিক স্তম্ভ হয়ে পড়ে দুর্বল। তাই আটের দশকে এই হাসপাতালের বড় বড় ডিগ্রীধারী ডাক্তাররা জোকার বা ক্লাউন সেজে নামলেন রাস্তায়। দেশ বিদেশ ঘুরে দুর্ভিক্ষ অভাগা মানুষদের হাসাতে শুরু করলেন ক্লাউন ট্রিপ। আর এই ক্লাউন ট্রিপের হাত ধরেই যুক্ত হন ১২০ জন খ্যাতনামা চিকিৎসক।
তবে গাজেনঢাইট বর্তমানে অর্থের অভাবে তালা বন্ধ। প্যাচ অ্যাডামস এবং তাঁর সাথীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন আবার নতুন ধাঁচে হাসপাতালটি চালু করার। আর হয়ত বেশি দেরি নেই সেদিনের অপেক্ষার। রোগীদের হাসির ঝলক হয়ত আবারও ফিরে আসবে হাসপাতাল চত্বরে। হয়ত আবারও শোনা যাবে আদর যত্ন ভালোবাসায় ভরে উঠেছে সেই হাসপাতাল। হয়ত প্যাচের সেই গাজেনঢাইট আবার পরিণত হবে এক মনোহরা স্বপ্নপুরীর হাসপাতালে।
Discussion about this post