একটি মেয়ে খুঁজে চলেছে তাঁর নিজের বাবাকে, খুঁজেছে তার নিজের বংশ পরিচয়। এক দুই বছর নয়। দীর্ঘ আট বছর ধরে হন্যে হয়ে খোঁজার পরে, সে জানতে পেরেছে তার বাবা বিগত তিন বছর ধরে ছিলেন তার সামনেই। তার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলের ফ্রেন্ডলিস্টে! না, এটা কোনো সিনেমার গল্প নয়। এই গল্প ভীষণ বাস্তব। এই ঘটনা ঘটেছে জর্জিয়ান এক মহিলার সঙ্গেই। তাঁর এই খোঁজ আর খুঁজে পাওয়ার যাত্রার মধ্যেই নিজের তো বটেই, তিনি বদলে দিয়েছেন আরও অনেকগুলি পরিবারের মানুষের জীবন।
তামুনা মুসেরিদজে একজন জর্জিয়ান সাংবাদিক। ২০১৬ সালে আচমকা তাঁর ‘মা’ মারা যাওয়ার পরে, তিনি জানতে পারলেন যে তিনি আসলে দত্তক নেওয়া সন্তান। মৃত মহিলা তাঁর আসল মা নন। সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় তাঁর নিজের অতীত সম্পর্কে খোঁজ। এই কারণেই তিনি ফেসবুকে একটি পেজ তৈরি করেন, যার মাধ্যমে প্রথমে তিনি তাঁর জীবিত জন্মদাত্রী ‘মা’কে খুঁজে পান। তবে সেই মা তাঁকে সাহায্য করতে চাননা। তবে পরে জানান তামুনার জৈবিক বাবার নাম, গুরগেন খোরাভা। এই গুরগেন ফেসবুকে তামুনার বন্ধু হিসেবে তিন বছর ধরে ছিলেন। পরবর্তীতে, তাঁরা জর্জিয়ার জুগদিদি শহরে দেখা করেন। গুরগেন তামুনাকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
সব ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যেও তামুনা তাঁর শিকড় খুঁজে পেয়েছেন এটাই এখন তাঁর তৃপ্তির জায়গা। তবে তিনি এখনও স্পষ্ট করে জানেন না কীভাবে তিনি তাঁর বাবা মায়ের থেকে আলাদা হয়েছিলেন। তিনি নিজে একজন সাংবাদিক। তিনি বলেছেন, তাঁর এই খোঁজ যতখানি তাঁর নিজস্ব খোঁজ ছিল, ততখানিই ছিল তাঁর পেশাগত খোঁজ। তাঁর ফেসবুক গ্রুপটি সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গীকৃত জর্জিয়ার হারিয়ে যাওয়া মানুষের জন্য এবং পরিবারের জন্য, যারা তাদের ‘বায়লজিক্যাল’ সদস্যদের খুঁজতে চায়। গতবছরেই এই গ্রুপের সাহায্যে এক জমজ বোন খুঁজে পেয়েছিল তারই জমজ বোনকে।
ফলে, তামুনা মুসেরিদজের এই খোঁজ একটি শিশুপাচারের কেলেঙ্কারির সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে। যার প্রভাব পড়েছে জর্জিয়ায় হাজার হাজার মানুষের জীবনের উপর। ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জানা যাচ্ছে, অনেক বাবা-মাকে জানানো হয়েছিল যে তাদের নবজাতক সন্তান মারা গেছে। কিন্তু আসলে, সেই শিশুদের চুরি করে বিক্রি করা হয়েছে। তাই তামুনার ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির উদাহরণ নয়, বরং একটি বড় সামাজিক ও নৈতিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। তামুনার অনুসন্ধান এবং এই সত্য প্রকাশ, শুধুমাত্র তার নিজের গল্প নয়, বরং অসংখ্য ভুক্তভোগী পরিবারের কণ্ঠস্বর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Discussion about this post