তিলোত্তমার বিচার এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবি নিয়ে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গের জুনিয়র চিকিৎসকরা। সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত সদর্থক আলোচনা না হওয়ায়, আন্দোলন আরো দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে চলছে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিবাদ। রাজনৈতিক রং যাতে এই আন্দোলনে না লেগে যায়, সেটার সম্পূর্ণ প্রচেষ্টা করছেন ডাক্তাররাও। এই পরিস্থিতিতে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়াচ্ছে নাগরিক সমাজ। Swiggy বা Zomato-র মত বিভিন্ন ফুড ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার করা হচ্ছে জল, খাবার।
নাগরিক সমাজের তরফ থেকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে, ‘তোমাদের লড়াইয়ে আমরাও পাশে আছি’। আর সেই কারণেই সমাজের একটা বড় অংশ, কোন পূর্বপরিচয় ছাড়াই, জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাড়াচ্ছে। প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভস্থলে প্রচুর জলের প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে গাড়ি করে। Blinkit অ্যাপ ব্যবহার করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবার। তবে কারা অর্ডার করছেন, তাদের নাম পরিচয় জানা যাচ্ছে না।
শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, বহু মানুষ যেকোনোভাবে আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকতে চাইছেন। রাজপথে রাত জাগতে ছেলেমেয়েদের যা যা প্রয়োজন, সে সবই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে। এমনকি, সল্টলেক সেক্টর ফাইভের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বেশ কিছু বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থাও করা হয়েছে ডাক্তারদের জন্য। লালবাজারেও যখন অভিযান হয়েছিল, সেই সময় আশেপাশের লোকজন তাদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আর এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে সল্টলেকেও।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি, বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাগুলিও নানাভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ডাক্তারদের। বিদেশ থেকেও মিলেছে সাহায্য। মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেখে, অভিভূত হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররাও। কলকাতার মানুষ যেভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট, এই আন্দোলনে শুধুমাত্র ডাক্তাররা একা নেই। মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্য দেখে ডাক্তাররা বলছেন, যে খাবার তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন, সেটা আর ব্যাগ থেকে বের করতেও হয়নি। এমনকি বৃষ্টিতে যাতে ডাক্তারদের অসুবিধা না হয়, সেই দুশ্চিন্তা দূর করে এক ডেকোরেটর মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ একের পর এক ত্রিপল টাঙিয়ে তাদের বসার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন।
এদের কারোরই পরিচয় কিন্তু কেউ জানেন না। ডাক্তাররা তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলছেন, “মানুষ যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন, তাতে আমরা অভিভূত। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। আর এটাই আমাদের প্রধান শক্তি।” শুধুমাত্র মানবিকতার খাতিরেই কি এতটা করছেন সবাই, তেমনটা হয়তো না। তাহলে কি, সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ এভাবেই প্রকাশ পাচ্ছে? নাকি শুধুই তিলোত্তমা আর ডাক্তারদের জন্য এতটা আবেগাপ্লুত মানুষজন?
Discussion about this post