শান্তিপুরের উল্লেখযোগ্য এক অনুষ্ঠান হলো গাজী মিঞার বিয়ে। বৈশাখ মাসে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে ঘুচে যায় ধর্মের ভেদাভেদ। বৈশাখ মাসের শেষ রবিবার শান্তিপুরের মালঞ্চে বিরাট এক মাঠে শুরু হয় উৎসব। গাজী মিঞার বিয়ে কথাটা এখন এসে দাঁড়িয়েছে গাজীমের বিয়েতে। গাজী মিঞা ছিলেন উত্তর প্রদেশের এক ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তাকে নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। শোনা যায়, তার সাথে জহরা বলে একজনের বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ে করতে যাবার পথে এক দুর্ঘটনায় বরযাত্রীসহ গাজী মিঞার মৃত্যু হয়। ফলে তার বিয়ে আর হয় না।
অন্যদিকে এও শোনা যায়, গাজী এবং জহরা একে অপরকে ভালোবাসতেন। তবে বিয়ের আগে জহরা মারা যান। আর গাজী মিঞা আজীবন অবিবাহিত থাকেন। পরবর্তীতে গাজী মিঞা মারা গেলে তাকে জহরার কবরের পাশেই কবর দেওয়া হয়। সেখানে পর পর দুটো নিশান রাখা হয়। ভালোবাসা শুয়ে থাকে কবরে।
এই কাহিনী থেকেই শুরু গাজী মিঞার বিয়ের উৎসব। বিরাট মাঠে দুটো বা চারটে বাঁশ রাখা হয়। সিল্কের কাপড় জড়িয়ে তাদের মাথায় থাকে ছোট্ট কালো চামর। প্রতি জোড়া বাঁশের একটা মামা আর একটা ভাগ্নে। একটি পাড়ার থেকে পাত্র পক্ষ এবং আরেক পাড়া থেকে হয় পাত্রী পক্ষ। রবিবারের গোটা রাত জুড়ে চলে অনুষ্ঠান। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী দুটো বাঁশকে ঠেকিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে সোমবার। ধারণাটা হলো এই যে, ভাগ্নে এসে মামাকে ছুঁয়ে দিলে বিয়ে ভেঙে গেলো। পুরো উৎসবের কাহিনী গুলো ব্যর্থ প্রেমের। কিছুটা সেই ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ এর মতো। তবে, এই শেষ দিনেও অনেক মানুষ বিয়ে ভাঙা দেখতে আসেন।
সন্তানের মঙ্গল কামনা বা নিজেদের মনকামনা পূর্ণ হলে অনেকেই ফল, মিষ্টি দান করেন। শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষই নয়, এতে যোগদান করেন বহু হিন্দু ধর্মের মানুষও। আগে বাজনা বাজিয়ে অনুষ্ঠান হলেও, এখন কান ফাটানো মাইকেরই রাজত্ব সর্বত্র। তবে গল্প যাই হোক, এ অনুষ্ঠান আসলে সম্প্রীতির। শান্তিপুরের এই উৎসব একদিনের হলেও মেলা চলে প্রায় একমাস। দূর দূরান্ত থেকে এসে মানুষ যোগ দেন উৎসবে। মেয়েরা বিক্রি হওয়া মালা মাথায় দেয় আর পুরুষেরা গলায়। আর কথায় তো আছেই, মেলা মানেই মিলনস্থল।
Discussion about this post