পুজো এলেই নানা ভাবে মন টানে বনেদি বাড়ির পুজো। হুগলি জেলার গরলগাছা রাজবাড়ি তেমনই এক বিখ্যাত বাড়ি। এ বাড়ির পুজোর বয়স প্রায় ২৫৬ বছর। আর এ বাড়ির দূরত্ব কলকাতা থেকে মাত্র ২০ কিমি। সুতরাং, এবার পুজোয় যাওয়া যেতেই পারে হুগলির গরলগাছা রাজবাড়িতে।
এ রাজবাড়ির আরও একটি নাম রয়েছে, ‘বাবুদের বাড়ি’। মুর্শিদাবাদের নবাবের কাছ থেকে পণ্ডিত সন্তোষ মোহন বিদ্যাবাগীশ এ জায়গা উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। এটা প্রায় ১৭৬৭ সালের কথা। তাঁর ছিল দুই ছেলে। গোকুলচন্দ্র এবং রাধানাথ, এনারা দুই ভাই মিলে শুরু করেন দুর্গাপুজো। আবার কেউ কেউ বলেন নবকিশোর বলে কোনো এক বংশধর শুরু করেন এ পুজো। তবে যেই শুরু করে থাকুন না কেন সেই পুজো আজও নিয়ম রীতি মেনে হয়ে আসছে। তৎকালীন সময়ে, রাধানাথের পুত্র দ্বারকানাথ ব্রিটিশদের থেকে ‘রায় বাহাদুর’ উপাধি পান। সেই থেকেই বোধহয় বাবুদের বাড়ি বলে এ বাড়ির খ্যাতি।
বাইরের দিকে এ বাড়ির রঙ সাদা। তবে, ভেতর দিকের লাল রঙের দেওয়ালের সঙ্গে সবুজ জানলাগুলো আজও যেন প্রাচীনতার সাক্ষী। এত সব ছেড়েও এ বাড়ির মুখ্য আকর্ষণ ঠাকুর দালান। পুজোর সময় পরিবারের লোকজন তো থাকেই। সেই সাথে আশেপাশের মানুষের ভিড়ে জমজমাট পরিবেশ তৈরি হয় এ বাড়িতেও। গোটা উঠোন জুড়ে থাকে কার্পেট বিছানো। দর্শনার্থীদের জন্য সারি দিয়ে সাজানো থাকে চেয়ার। প্রতিমার ভীষণ কোনো ব্যতিক্রম নেই যদিও। মা দুর্গা স্বমহিমায় পুজো নেন পুজোর পাঁচ দিন। তবু এ পুজোর বিশেষত্ব হিসেবে বলা যায়, এ বাড়িতে কুমারী পুজোর কোনো রীতি নেই।
গরলগাছা রাজবাড়িতে যাওয়ার উপায়ও খুব সহজ। ট্রেন এবং গাড়ি যে কোনো রাস্তা দিয়েই পৌঁছে যাওয়া যায়। রেলপথে শিয়ালদহ থেকে ডানকুনি অথবা হাওড়া থেকে কর্ড লাইন ধরে বর্ধমানগামী কোনো ট্রেন ধরতে হবে। ডানকুনি স্টেশনে নেমে কোনো অটো বা টোটোকে জমিদার বাড়ি বললেই হবে। রাস্তা ধরে আসলেও প্রধানত পৌঁছে যেতে হবে ডানকুনি। সেখান থেকে ম্যাপ দেখে খুব সহজেই চলে আসতে পারেন গরলগাছা রাজবাড়ি।
চিত্র ঋণ – শ্রীপর্ণা ভট্টাচার্য
Discussion about this post