বাঙালি মানেই উৎসবমুখর। বাংলা বছরের শেষ মূহুর্তের বাঙালির অন্যতম লোকউৎসব গাজন উৎসব। গাজন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ও বাংলাদেশে উদযাপিত একটি হিন্দুধর্মীয় উৎসব। গাজন মূলত শিব, মনসা ও ধর্মঠাকুরের পুজো কেন্দ্রিক উৎসব। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পূজার সঙ্গে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। গ্রাম বাংলার বিভিন্ন অংশে নানা ধরণের রীতি নীতির মাধ্যমে পালিত হয় জনপ্রিয় এই উৎসব। তবে উৎসবের অঙ্গ হিসেবে মৃতদেহের সাথে আচার পালন, শুনলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠলেও, প্রাচীন রীতি মেনে মৃত দেহের খুলি নিয়ে নাচ আজও দেখা যায় শিব মন্দিরে।
রূপপুর, কান্দি শহরের অন্যতম একটি অঞ্চল। এখানেই রয়েছে রুদ্রদেবের মন্দির। চৈত্র মাসের শেষে রুদ্রদেবের মন্দিরে মহা সমারোহে পালিত হয় গাজন উৎসব। স্থানীয়দের মতে, মৃত দেহের খুলি নিয়ে নাচের এই রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে কান্দিতে। কান্দি শহরের স্থানীয়দের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকেও বহু মানুষ ভিড় জমান বাবা রুদ্রদেবের গাজন উৎসবে। হাজার হাজার ভক্তদের ভিড় সামাল দিতে হাজির থাকেন বিশাল পুলিশবাহিনী।
গাজনের দিন রুদ্রদেবের বিগ্রহকে বাবার বাড়ি মন্দির থেকে পালকি করে সারা শহর পরিক্রমা করানো হয়। পরিক্রমা শেষে বিগ্রহ নিয়ে যাওয়া হয়, হোম তলা মন্দিরে। সেই বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। পরের দিন অর্থাৎ চরকের দিন বিগ্রহকে পুনরায় পালকি করে শহর পরিক্রমা করে, নিয়ে আসা হয় বাবার বাড়ি মন্দিরে। পরিক্রমার সময় আশে পাশের বহু ভক্তরা বিগ্রহের মাথায় জলও দেন। গাজনের দিন মৃতদেহের খুলি নিয়ে নাচের পাশাপাশি ভক্তরা সঙ সেজে নাচ করেন বাবা রুদ্রদেবের সামনে। এছাড়াও শিবের নানা লৌকিক ছড়া আবৃত্তি ও গান করা হয়।
গাজন উৎসবের মূল দায়িত্ব পালন করে থাকেন সন্ন্যাসীরা। চৈত্র মাসে গাজনের সন্ন্যাসীরা নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রণা দিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতাকে খুশি করার চেষ্টা করেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে মনসার গাজনে মহিলা সন্ন্যাসী বা ভক্তারা অংশ নেয়, তারা চড়কের সন্ন্যাসীদের মতোই অনুষ্ঠান পালন করে। চৈত্র মাস ছাড়া বছরের অন্যসময় শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হলে তাকে ‘হুজুগে গাজন’ বলা হয়। প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন কান্দির গাজন উৎসবের প্রতি আজও সাধারণ মানুষের আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমেনি। প্রতিবছর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কান্দি শহর সেজে ওঠে অপরূপ সাজে।
Discussion about this post