চতুর্থ দফার লকডাউন চলছে দেশ জুড়ে। তাতে সামিল হয়েছে রাজ্যও। লকডাউনের জেরে বন্ধ কর্মসংস্থানের রাস্তাও। নিম্নবিত্ত তো বটেই হাতে টান পড়তে শুরু করেছে মধ্যবিত্ত বাঙালির হাতেও। এর মধ্যে সবথেকে বেশি সমস্যায় অসুস্থ মানুষগুলির পরিবার। বাড়ির এক বা একাধিক সদস্যের নিয়মিত চিকিৎসার জন্য অর্থের জোগান দিতে প্রায় হিমশিম খাওয়ার অবস্থা তাঁদের। অর্থের অভাবে ছেদ পড়ছে নিয়মিত চিকিৎসতেও। ঠিক এরকম সময়ই প্রায় ‘ভগবানের দূত’ হিসাবে এগিয়ে এলেন চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম। নিরুপায় মানুষগুলির পাশে দাঁড়াতে মাত্র ৫০ টাকায় তিনি করাচ্ছেন ডায়ালিসিস। এই বাজারে যা বিরল!
পেশায় চিকিৎসক ও রাজনৈতিক কর্মী ফুয়াদ হালিমের বাড়ি কিড স্ট্রিটে। অর্থাভাবী মানুষের চিকিৎসার উদ্দ্যেশ্যে ২০০৮ সালে নিজের কিছু বন্ধুর সাহায্যে বাড়ির পাশেই গড়েছিলেন এক হাসপাতাল। নাম ‘স্বাস্থ্য সংকল্প’ হলেও, স্থানীয় লোকের ভাষায় গরীব লোকের হাসপাতাল হিসাবেই পরিচিত সেটি। হাসপাতালে নেই কোনও এসি বা ঝাঁ চকচকে ক্যান্টিন। নেই অত্যানুধিক কোনও ব্যবস্থাও। শুধু রয়েছেন কয়েকজন বিনা মাইনের চিকিৎসক আর কিছু স্বাস্থ্যকর্মী। অভাবী মানুষের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। লকডাউন শুরু হওয়ার আগে সেই হাসপাতালে ডায়ালেসিসের খরচ পড়ত ৩৫০ টাকা। লকডাউন শুরুর পর চিকিৎসক ফুয়াদ আর তাঁর সঙ্গীদের তাই সিদ্ধান্তে প্রতিদিন মাত্র ৫০ টাকায় চলছে সেই ডায়ালিসিস। লকডাউনের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ১৫৭৩ বার ডায়ালেসিসও হয়ে গেছে গরীবের সেই হাসপাতালে।
কিড স্ট্রিটের সেই হাসপাতালের অগোছালো ছোট্ট অফিস ঘরটিতে বসে চিকিৎসক ফুয়াদ হালিমের বক্তব্য- “আমরা কিন্তু মেডিকা বা পিয়ারলেস বা বেলভিউ নই। আমাদের হাতে অ্যাটম বোমা দূরের কথা, ভাল রাইফেলও নেই। তবে ঢাল-তরোয়ালটুকু আছে। সেটা দিয়েই লড়ে যাব। আর হ্যাঁ, খরচ প্রায় লাগবেই না। ডায়ালিসিসে আমরা শহরের অন্য কোনও হাসপাতালের চেয়ে কম নই।” লকডাউনের এই বাজারে অন্য কোথাও এত কম খরচে ডায়ালিসিস হচ্ছে কি না এখনও কোনও খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তবে গরিবের হাসপাতালের চিকিৎসক ফুয়াদের এই উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। আসলে তাঁর মত মানুষগুলি এখনও আছেন বলেই, সাধারণ মানুষ এখনও বাঁচার স্বপ্ন দেখে। ফুয়াদ হালিমদের হাত ধরেই নতুন জীবনের খোঁজে এগিয়ে যান নিরুপায়, অভাবী কিছু সাধারণ মানুষ। এই কঠিন সময়ে এগুলোই বা কি কম প্রাপ্তি!
তথ্য ঋণ – অর্ক ভাদুড়ি
Discussion about this post