কলেজের প্রথম বর্ষেই প্রেমিকের সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরিবারের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও এই সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, কারণ তখন তার চোখে সবকিছুই ছিল ভালোবাসার মোহে মোড়া। কিন্তু বাস্তবের মুখোমুখি হতে বেশি সময় লাগেনি। কিছুদিন পর তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন, আর সেই খবর জানার পর প্রেমিক তাকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। রূপকথার প্রেম আচমকাই শেষ হয়ে গেল। ফিরে আসেন বাস্তবের কঠিন মাটিতে। সন্তানের আগমনের খবর নিয়ে তিনি যখন পরিবারের দ্বারে গিয়ে দাঁড়ান, আশা করেন যে নবজাতককে দেখে হয়তো পরিবারের মন গলবে—কিন্তু সেখানেও মেলে প্রত্যাখ্যান।

তবে ভেঙে পড়েননি তিনি। বুঝেছিলেন, শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না, তাকে মানুষ করাটাই আসল কাজ। শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। সন্তানের নাম রাখেন ‘শিবসূর্য’—হয়তো ভাবেন এই সন্তান একদিন তার জীবনে আলো বয়ে আনবে। জীবন বাঁচাতে এবং সন্তানকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমে পড়েন। কখনও বিক্রি করেন মশলা, কখনও সাবান, কখনও আবার রাস্তার ধারে লেবুজল বা আইসক্রিম। এই লড়াইয়ের মঞ্চ ছিল কেরালার ভারাকালা। সঞ্চিত অর্থে ছেলের যত্ন নেন, পাশাপাশি কলেজের লেখাপড়াও শেষ করেন সমাজবিদ্যায় স্নাতক হয়ে।
তবে সংসার চালাতে এবং জীবনে স্থিতি আনতে দরকার ছিল নিশ্চিত উপার্জনের। শুরু করেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি। একদিকে সন্তানের দেখাশোনা, অন্যদিকে নিজের পড়াশোনা আর অর্থসংস্থানের চাপ—সবই তিনি একাই সামলাচ্ছিলেন। ভাগ্য অবশেষে সাড়া দেয় ২০১৬ সালে, যখন তিনি পুলিশের চাকরির পরীক্ষায় সফল হন। এতে তার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ে। উচ্চাকাঙ্ক্ষার ডানায় ভর করে ফের প্রস্তুতি নেন আরও উঁচু পদে পৌঁছনোর জন্য। ২০১৯ সালে সাব-ইন্সপেক্টর পদের পরীক্ষাতেও সফল হন তিনি।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয় ২০২১ সালের ২৫ জুন। যেই ভারাকালার রাস্তায় দশ বছর আগে তিনি লেবুজল বিক্রি করতেন, সেই এলাকার থানায়ই তার পোস্টিং হয় সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে। কাকতালীয় হলেও এ যেন জীবনচক্রের এক পরিপূর্ণতা। যেখান থেকে শুরু করেছিলেন লড়াই, সেখানেই এবার নেতৃত্বের আসনে তিনি। আজ তিনি শুধু একজন পুলিশ অফিসার নন, তিনি অনুপ্রেরণা। তিনি এনি শিবা – ভারকালা থানার সাহসিনী সাব-ইন্সপেক্টর। তিনি চান তার ছেলে বড় হোক মানুষের মতো মানুষ হয়ে, আর তিনি নিজেও চাকরি জীবনে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠুক – এই প্রার্থনাই আজ তার জীবনের চালিকাশক্তি।
চিত্র ঋণ – মনিকা বিশ্বাস
Discussion about this post