পৃথিবীতে অনেক রকমেরই সম্পর্ক হয়। কোনোটা ভালো আবার কোনোটা মন্দ। কোনটা স্বার্থের কোনোটা আবার নিঃস্বার্থর। তেমনই এক সম্পর্ক হল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এ এমন এক সম্পর্ক যা হয় নিঃস্বার্থভাবে। অন্তত হওয়াটা তেমনই উচিৎ। যেমন ধরুন মধ্য আমেরিকার চিতোর সাথে পোচোর বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
তবে এ বন্ধুত্ব একটু অন্যরকম। অনেক পশু পাখির সঙ্গেই মানুষ তো বন্ধুত্ব করে। কিন্তু মানুষ কুমিরের মতো হিংস্র প্রাণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে, বা বলা ভালো কুমিরই মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করেছে এমন কথা শুনেছেন কখনও? মধ্য আমেরিকায় ঘটেছিল তেমনই এক ঘটনা। সেখানকার এক স্থানীয় জেলে গিলবার্তো চিতো শেডেন রিভেন্টাজন নদীর তীরে এক কুমিরকে মৃতপ্রায় অবস্থায় পান। জানা যায় কুমিরটা গরুর পালের ওপর আক্রমণ করেছিল বলেই স্থানীয় গরু চাষীরা কুমিরটিকে গুলি করে। যেই গুলি লাগে কুমিরটার মাথায়। মৃতপ্রায় কুমিরটাকে দেখে শেডেন সেই ৭০ কেজির কুমিরটিকে বাড়ি নিয়ে আসেন। প্রায় ৬ মাস ধরে চলে তার দেখাশোনা। এসময়ে শেডেন কুমিরটাকে প্রায় ৩০ কেজির মাংস ও মাছ খাওয়ান। কিন্তু শেডেন অনুভব করেছিলেন যে কেবল খাবার খাইয়ে কুমিরটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব নয়। কুমিরটার সঙ্গে থাকতে থাকতে শেডেনও ওই হিংস্র প্রাণীটার সাথে যেন ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। রাতে সে কুমিরটির সঙ্গে ঘুমাত, গল্প করত এমনকি আদর পর্যন্ত করত। এক জায়গায় তিনি জানান যে তিনি বুঝেছিলেন কুমিরের মধ্যে বেঁচে থাকার ইচ্ছা ফিরিয়ে আনতে কুমিরটির তার ভালোবাসার প্রয়োজন।
এইভাবে প্রায় ৬ মাস কেটে যাওয়ার পর কুমিরটি যখন সুস্থ হয়ে ওঠে তখন শেডেন কাছেরই এক নদীতে ছেড়ে আসেন কুমিরটিকে। কিন্তু পরের দিন দেখেন এক অবাক কান্ড। তার বাড়ির বারান্দায় সেই কুমিরটা যাকে সে এতদিন পরম স্নেহে যত্ন করেছে। তখনই সে ঠিক করে যে সে কুমিরটিকে নিজের কাছেই রাখবে। তার নতুন বন্ধুর নাম সে রাখে পোচো। এভাবেই ঘটে এক অনন্য বন্ধুত্বের সূত্রপাত। শেডেন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং কন্যার মতো পোচো হয়ে ওঠে তাদের পরিবারেরই অন্যতম সদস্য। শোনা যায় পোচোকে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার জন্যই নাকি শেডেনের প্রথম স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন!
এক আফ্রিকান পরিচালক রজার হরবক্স চিটো ও পোচোর উপর ‘দি ম্যান হু সুইমস উইথ ক্রোকোডাইলস’ নামক এক ডকোমেন্ট্রি তৈরী করেন। হরবক্স তার ডকোমেন্ট্রিতে এক দশক বা তার বেশি সময়ে ধরে চলা পোষ্য সরীসৃপ তাদের মালিকদের কীভাবে আক্রমণ করেছে সে কথা তুলে ধরেন। সে প্রসঙ্গে শেডেনেরও জীবনহানি ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন। তবে এ আশঙ্কা নস্যাৎ করে দিয়ে শেডেনেও বলেন এতবছর তারা একে অপরকে ভালোবেসেছে, দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন একসঙ্গে। এতদিন যখন কিছু হয়নি আর কখনো কিছু হবেনা বলেই তার বিশ্বাস। হরবক্সের অনুমান ছিল মাথায় গুলি লাগার কারণেই নাকি কুমিরের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির পরিবর্তন ঘটেছিল।
মাথায় গুলি লাগার জন্য নাকি শেডেনের অকৃত্রিম ভালোবাসা কোনটা পোচোর স্বভাব পরিবর্তন করেছিল তা জানা নেই। তবে পোচোর মৃত্যু হলেও তাদের বন্ধুত্বের নজির যে আজীবন জনমানসে থেকে যাবে তা বলাই বাহুল্য।
চিত্র ঋণ – Animal Australia, Our Plannet
Discussion about this post