বাঙালির পরিচয় বাঙালিই। কোনো কাঁটাতারই আসলে মন আলাদা করে দিতে পারেনা। একজন বাঙালি আরেকজন বাঙালির আবেগকে ঠিক চিনে নেয়, একে অন্যের সহায় হয়। গত ৩১ মার্চ তেমনি এক ভালোবাসার নজির সৃষ্টি হয়েছে। তার খোঁজ আমরা বেশি পাইনি। ভালো-মন্দের মিশেলে সোশ্যাল মিডিয়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষকে একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে মেতে যে সাহায্য করে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই।
বাংলাদেশের ‘বঙ্গ ভিটা’ নামের একটি ফেসবুক পেজে দুই বাংলার মানুষই সদস্য হিসাবে রয়েছে। দেশভাগের সময় সব ফেলে আসা মানুষরা অনেকেই এই পেজে তাদের শেকড়ের খোঁজ করে। এই পেজের বাংলাদেশের সদস্য তুহিন ফরিদের সঙ্গে আলাপ হয় পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণ কুমার ভট্টাচার্যের সঙ্গে। কল্যাণবাবুর আদি বাড়ি বরিশালের ঝালরকাঠি সদর উপজেলার গাভা রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে। তুহিন ফরিদকে তিনি তাঁর আদি ভিটের সন্ধানের অনুরোধ করেন। তুহিনবাবুও ফেরালেন না এপাড়ের বন্ধুর অনুরোধ। গত ৩১ তারিখে বেড়িয়ে পড়লেন সাইকেল নিয়ে কল্যান কুমার ভট্টাচার্যের ভিটের খোঁজে, তাঁর বাড়ি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে।
অনেক লোকের কাছে খোঁজ করে সেই ভিটের সন্ধান পেলেন। কিন্তু ঠিক জায়গায় পৌঁছেছেন কীনা তা নিশ্চিত করতে তো সেইসময়কার কাউকে দরকার। পাশের গ্রাম তের আনার ৯৭ বছরের হাসান মাঝির খোঁজ পেয়ে তার কাছে গেলেন। সব শুনে তিনি চিনতে পারলেন। সেই ভিটায় মান্নান ঠাকুর বলে একজন থাকেন। ঠাকুরবাড়ি থেকে তার নামে ঠাকুর যোগ হয়েছে। তবে অবশ্য মান্নান ঠাকুরও চার বছর হলো গত হয়েছেন। এখন সেখানে তার দুই ছেলে তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন। সেই বড় ছেলের বউয়ের কাছে তুহিন ফরিদ সব গল্প খুলে বলেন। তিনি তাদের নিয়ে এসে নিজেদের ভিটে দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
তুহিন ফরিদ নিজেই ‘বঙ্গভিটা’র পেজে এই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। এমন কতো গল্প, কতো ছেড়ে আসা ভিটের কথা, দুই বাংলার কতো মানুষ সব হারিয়েও স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে। সেইসব স্মৃতি হাতড়াতে তারা একে অন্যকে সাহায্য করে তারাই তো বন্ধু, আত্মীয়, দেশের লোক। কীসের কাঁটাতার? কীসের ধর্ম? মানুষের মানুষকে ভাগ বললেই কি ভাগ হয়?
Discussion about this post