মাত্র আট বছর বয়সে কাজী নজরুল ইসলামের প্রেরণায় গানের প্রতি আকর্ষণ। সাহিত্যিক বিমল মিত্রের কথায় ও অনুপম ঘটকের সুরে প্রথম রেকর্ড করলেন, “সাঁঝে যখন উঠেরে চাঁদ” এবং “নূতন চাঁদের তিথি এল”। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর কণ্ঠে “পৃথিবী আমারে চায়” গানটি অসম্ভব প্রিয় হয়ে উঠেছিল। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে এই গানটি এতটাই সফল হয়েছিল, যে গ্রামোফোন কোম্পানি রেকর্ডের জোগান দিতে হিমশিম খেয়েছিল। তিনি শিল্পী সত্য চৌধুরী।
চার দশকের সঙ্গীত জীবনে, সত্য চৌধুরী বাংলা গানের শ্রোতাদের মন ভরিয়ে রেখেছিলেন তাঁর কন্ঠ দিয়ে। জাগরণের গানে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। ১৯৪১ সালে “কবি জয়দেব” ছবির নেপথ্য গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর বাংলার “বন্দিতা”, “পথের দাবী”, “মন্দির”, এবং হিন্দির “কুরুক্ষেত্র”, “আমীরী”, “মঙ্গলসুত্র” প্রভৃতি ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। অভিনয়েও তিনি দক্ষ ছিলেন, অভিনয় করেছিলেন “মন্দির” ও “রাঙামাটি” ছবিতে। তাঁর সুরারোপিত গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ও নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৩৭ সালের ১০ মে, সত্য চৌধুরীর প্রথম বেতার অনুষ্ঠানে নজরুলের ভক্তিগীতি “কে তোরে কী বলেছে মা, ঘুরে বেড়াস কালি মেখে” গানটি পরিবেশনের পর বাড়ি ফিরে পিতা যতীন্দ্রমোহন ও মাতা বিমলা দেবীর প্রশংসা পান। বনেদি পরিবারে জন্ম নেওয়া সত্য চৌধুরী, তাঁর মায়ের অনুরোধে অভিনয় ছেড়ে গানকেই জীবনের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন। পড়াশোনায় মেধাবী সত্য চৌধুরী ইন্টার কলেজ মিউজিক কমপিটিশনে ছয়টি বিভাগে প্রথম হন।
সত্য চৌধুরীর প্রতিভা রোমান্টিক গান থেকে ভক্তিগীতিতে, রবীন্দ্রসংগীত থেকে নজরুলগীতিতে ছিল স্বতন্ত্র। মোহিনী চৌধুরীর কথায় ও কমল দাশগুপ্তের সুরে “পৃথিবী আমারে চায়” তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। এই গানটি হিন্দিতে অনুবাদ হয় এবং সেই হিন্দি গানটিও তিনিই গেয়েছিলেন। যদিও তিনি সর্বভারতীয় স্তরে যাননি, সারাজীবন থেকে গেছেন বাংলায়। তবু তাঁর প্রতিভা ও গানের গভীরতা আজও বাংলা সঙ্গীত জগতে অমর।
Discussion about this post