বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন, মুক্তিযুদ্ধের এক বিদেশি সৈনিক ফাদার ইভান্স। একাত্তরে পাকবাহিনীর হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটে বেড়িয়েছে। কিন্তু মন্দির, মসজিদ গির্জা কিছুই রক্ষা পায়নি। খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হতো গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের। সে সময় প্রাণভয়ে গির্জার ফাদাররাও নিজেদের দেশে ফিরে যেতে থাকে। কিছু ফাদার ছিল ব্যতিক্রম। তারা নানাভাবে সাহায্য করে সাধারন মানুষকে। কেউ কেউ নিয়েছিলেন প্রাণের ঝুঁকিও। তেমনই একজন হলেন ফাদার ইভান্স।
ম্যাসাচুসেটসের পিটসফিল্ডে ১৯১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ইভান্সের জন্ম হয়। এরপর ১৯৪৫ সালে ধর্মযাজক হয়ে, ব্রিটিশ জাহাজ মালঞ্চে ভারতবর্ষে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় গোল্লা মিশনের দায়িত্বে ছিলেন ফাদার উইলিয়াম ইভান্স। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফাদার ইভান্স আশ্রয়, খাবার ও চিকিৎসা দিয়ে গ্রামবাসীদের সাহায্য করতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নৈতিক সাহস জোগাতে থাকেন। গোল্লা মিশনের সাব- মিশন নবাবগঞ্জ বক্সনগর মিশনের স্কুলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প গড়ার অনুমতি দেন। আর তাতেই পাকবাহিনীর রোষে পড়েন।
১৯৭১-এর ১৩ নভেম্বর ফাদার গোল্লা মিশন থেকে বক্সনগর যাচ্ছিলেন। তখন ঢাকার নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ইচ্ছামতি নদীর পাড়ে পাকসেনারা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। প্রথমে পাকিস্তানি সৈন্যরা নৌকা থামাতে বলে। তারপর নৌকা থেকে নামতেই রাইফেলের বাঁট দিয়ে ফাদারের মুখে আঘাত করা হয়। তারপর দুটো গুলি করে ফাদারের দেহ ছুঁড়ে ফেলা হয় নদীতে। পরদিন লাশ ভেসে উঠলে কিছু গ্রামবাসী ফাদারের লাশ খুঁজে পেয়ে নিয়ে যায় গোল্লা মিশনে। গোল্লা মিশনের সমাহিত করা হয় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের এই বিদেশী বন্ধু ফাদার ইভান্সকে।
Discussion about this post