তরুণ মেকআপ আর্টিস্ট কিশোরী মণ্ডলের সঙ্গে কৃষ্ণার পরিচয় হল। হল পাড়ার যাত্রার অনুষ্ঠানে। পরে যা ভালোবাসায় পরিণত হয়। লুকিয়ে বিয়েও সারেন তাঁরা। কম বয়সে বিয়ের অপরাধে কৃষ্ণাকে যেতে হয় হোমে। তবু তাঁদের ভালোবাসা কমেনি। হোম থেকে ফিরে স্বামীর কাছে শুরু পালাগান শেখা। দুইজনে তৈরি করেন পালাগানের দল ‘মাতৃবন্দনা’। দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের দল পালা পরিবেশন করে। গঙ্গাসাগর মেলাতেও দেখা মিলল তাঁদের।
কৃষ্ণা ও তাঁর দল ‘মাতৃবন্দনা’ মূলত মনসামঙ্গল, শীতলা, ও মঙ্গলচণ্ডীর পালাগান পরিবেশন করে। রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তালিকাভুক্ত এই দল বছরের বেশিরভাগ সময় পালাগান নিয়েই ব্যস্ত। বিগত তিন বছর ধরে কৃষ্ণা সাগর মেলাতেও অংশ নিয়েছেন। ডায়মন্ড হারবারের সরিষার বুনোরহাটের অভাবী পরিবারে জন্ম নেওয়া কৃষ্ণা কখনোই স্কুলে যেতে পারেননি। তবুও তাঁর প্রতিভা আজ সকলের প্রশংসার কেন্দ্রবিন্দু। পেশাদার শিল্পী হিসেবে তাঁর সুরেলা কণ্ঠে সকলেই মুগ্ধ।
সমুদ্রের পাড়ে অসংখ্য মানুষের মধ্যে রাধার বেশে পালাগান গাওয়া, কৃষ্ণার জীবনে যেন অনেকটা সিনেমার চিত্রনাট্য। গ্রামবাংলার হারিয়ে যেতে বসা লোকসংস্কৃতি পালাগান বাঁচিয়ে রাখতে স্বামী কিশোরী মণ্ডলের সঙ্গে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রথাগত অক্ষরজ্ঞানহীন কৃষ্ণা। এই বছরেও কৃষ্ণভজন থেকে মঙ্গলকাব্যের পদ গেয়ে মুগ্ধ করছেন সবাইকে। আর লুপ্তপ্রায় পালাগান বাঁচিয়ে রাখতে কৃষ্ণা-কিশোরীর আপ্রাণ চেষ্টা মুগ্ধ করেছে সকলকে।
তবে এত প্রশংসার মধ্যেও কৃষ্ণা নির্লিপ্ত। এই প্রসঙ্গে তিনি একগাল হেসে জানান, যে তাঁর স্বামী কেমন করে কানের কাছে বলে বলে তোতা পাখির মত তাঁকে মুখস্ত করিয়েছিলেন পালাগান। আর কেমন করে অভাবের জীবন কাটাতে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় গান গেয়ে গেয়ে বেড়িয়েছেন। শেষে সাগর মেলায় এসে তাঁদের মুক্তির আশায় শিলমোহর পড়েছে। অভাবের তাড়নায় হলেও, তাঁদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে লোকসংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার উজ্জ্বল উদাহরণ।
Discussion about this post