ঢাকার প্রথম পাঠাগার নিয়ে আজও বয়ে চলে বিতর্ক। সেখানে একেবারেই চাপা পড়ে যায় আসল প্রাচীন লাইব্রেরির কথা। অনেকেই হয়তো জানেন না ঢাকার সবচেয়ে পুরনো লাইব্রেরি হলো ‘রামমোহন রায় পাঠাগার’। যার বয়স গড়িয়েছে ১৫০ বছরের কোটায়। পুরান ঢাকার পাটুলিয়াতে কলেজিয়েট স্কুলের পাশেই অবস্থিত এই লাইব্রেরি আজও দাঁড়িয়ে অতীতের মেরুদন্ডের ওপর ভর করে।
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এ রামমোহন অন্য কেউ নন, বরং সেই ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা। আর এই লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজের হাত ধরে। ইতিহাস প্রতিনিয়ত গল্প বলে। তেমনই এখানকার ইতিহাস বলছে, ১৮৭১ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয় এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার। পাশাপাশি ব্রাহ্ম সমাজের উদ্যোগ ছিল উপাসনা, ধর্মালোচনা ইত্যাদি সংস্কারমূলক কাজ।
এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার পেছনে প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ঢাকার নাট্য আন্দোলনের সূচনাকারী অভয় চন্দ্র দাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সমৃদ্ধ হতে শুরু করে এই পাঠাগার। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দানে স্বয়ং সরস্বতীর আশীর্বাদ যেন ঝরে পড়ে এই লাইব্রেরির ওপর। প্রায় ১০ হাজার বইয়ের সংগ্রহশালা ছিল এই লাইব্রেরি। তবে সুখ সইলো না। একাত্তরে পাক বাহিনীর হানায় সব ছাড়খার হয়ে গেলো। এভাবেই রীতিমত অদৃশ্য হয়ে যায় বাঙালির গর্বের লাইব্রেরিটি। হানাদার বাহিনী এই লাইব্রেরি থেকে গুরুত্বপূর্ণ বই গায়েব করে দেয়। সেই হিসেবে লাইব্রেরিটি একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়।
শোনা যায়, লাইব্রেরিটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মত ব্যক্তিত্ব এসেছিলেন। ১৮৯৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকার কিছু বিশিষ্ট দর্শনীয় স্থানের কথা উল্লেখ করেন। সেই স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ঢাকার এই রামমোহন লাইব্রেরি। বর্তমানে এর স্থানান্তর হয়েছে। লাইব্রেরি হিসেবে জায়গা পেয়েছে পুরান ঢাকার পাটুলিয়ার ব্রাহ্মসমাজ বিল্ডিং এর একটি কক্ষ। ঢাকার প্রথম লাইব্রেরি কোনটি তা নিয়ে হয়তো বিতর্কের শেষ হবে।
চিত্র ও তথ্য ঋণ – Stay Curious SIS
Discussion about this post