যশোর, বাংলাদেশের একটি অতি প্রাচীন জনপদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যশোর যেন সবার থেকে আলাদা। প্রতি বছর এখান থেকে নানা ধরনের রঙিন ফুল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। তাই তো ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিত যশোর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যশোর একটি উল্লেখযোগ্য নাম। কারণ যশোরেই প্রথম উড়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিজয় পতাকা।
সময়টা ছিল মার্চ, ১৯৭০। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামক হত্যাকাণ্ড। এই সময় বিপুল সংখ্যক বাঙালিকে হত্যা করা হয়। এই অপারেশনের উদ্দেশ্যে ছিল মুক্তিযুদ্ধকে দুর্বল করে তোলা। কিন্তু তা কোনোভাবেই হয়নি। বরং আন্দোলন হয়ে ওঠে আরো প্রবল। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে যোগদান করে। ফলশ্রুতিতে পূর্ব ও পশ্চিম— দুই ফ্রন্টে আরেকটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সূচনা ঘটে।
৩, ৪ এবং ৫ ডিসেম্বর যশোরের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাস সহ পাক সেনাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে বিমান হামলা শুরু করে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় ধীরে ধীরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। হারের সম্মুখীন পাক বাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে খুলনার সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। ৬ ডিসেম্বর বিকেলের আগে যশোর সেনানিবাস সম্পূর্ণ খালি করে পালিয়ে যায় পাক বাহিনীর হানাদাররা। বিকেলে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তি বাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে তা দখল নেয়।
প্রথম শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। যশোরেই প্রথম উঠেছিল বিজয়ী বাংলাদেশের লাল বৃত্ত বিশিষ্ট সবুজ পতাকা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। পাড়া মহল্লায়ও শুরু হয় আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে ফেটে পড়েন গোটা জেলার মানুষ। সারা যশোর জেলা জুড়ে উড়তে দেখা যায় বাংলাদেশের পতাকা। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারা প্রায় ৯৩,০০০ সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নামে স্বাধিকার ও স্বায়ত্বশাসন লাভ করে।
চিত্র ঋণ – দীপু খান
Discussion about this post