মাত্র ১৭ বছর বয়সে এমন এক ইতিহাস রচনা করেছিলেন, যা আজও কেউ ভাঙতে পারেনি। হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে ১৯৫২ সালে ১০০ মিটার দৌড়ের প্রথম হিটে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এই বাঙালি কন্যা। ছেলেদের খেলাধুলার জগতে মেয়েদের প্রবেশাধিকার তখন ছিল প্রায় অসম্ভব অবাক করা কান্ড। সদ্য স্বাধীন ভারতের প্রথম মহিলা অলিম্পিয়ান নীলিমা ঘোষ। পরিবার ও সমাজের কঠোর প্রতিরোধ পেরিয়ে নীলিমা নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছিলেন। আর পথ দেখিয়েছিলেন আরও নারীদের।
কলকাতার মাটিতে অ্যাথলেটিক্সের হাতেখড়ি। পায়ে রানিং শু, ছোট প্যান্ট, গায়ে ডোরা কাটা জামা, তাঁর চেহারায় খেলা কোর্ট এক শক্তির আভা। এশিয়ান গেমসে ১৯৫১ সালে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে তিনি নজর কাড়েন। ১৯৫২ সালে মাদ্রাজে জাতীয় প্রতিযোগিতায় ৮০ মিটার হার্ডলসে প্রথম হয়ে অর্জন করেন হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার সুযোগ। সেখানকার সময় ছিল ১৩.১ সেকেন্ড, যা হেলসিঙ্কিতে উন্নত হয়ে দাঁড়ায় ১২.৯ সেকেন্ডে। অলিম্পিকে পেয়েছিলেন পঞ্চম স্থান, তবুও সেই পারফরম্যান্স ছিল নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য এক যুগান্তকারী মুহূর্ত।
অ্যাথলেটিক্স ছাড়াও ব্যাডমিন্টনে তাঁর দখল ছিল অতুলনীয়। রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে একাধিকবার বিজয়ীর মুকুট পড়েছেন। জ্যাভেলিন থেকে ডিসকাস—সব ক্ষেত্রেই তাঁর দক্ষতা ছিল অসাধারণ। পরিকাঠামোর অভাব থাকা সত্ত্বেও নীলিমা অক্লান্ত পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং ভালবাসার মাধ্যমে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর জন্য বাংলার মাটি তো বটেই, ভারতও পেয়েছিল এক আলোকবর্তিকা।
১৯৫৬ সালে জার্মান ফুটবলার কূর্ট ভিককে বিয়ে করে দেশ ছেড়ে চলে যান নীলিমা। তবুও খেলার প্রতি তাঁর ভালোবাসা অব্যাহত ছিল। হামবুর্গে থেকেও ব্যাডমিন্টন খেলা চালিয়ে যান। কিন্তু আজকের দিনে নীলিমা ঘোষ যেন বিস্মৃত এক অধ্যায়। আমরা কি মনে রেখেছি ভারতের হয়ে অলিম্পিকে প্রথম দৌড়ানো এই মেয়েটিকে? তাঁর কীর্তি আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস হলেও, আমাদের স্মৃতিতে তিনি হারিয়ে গেছেন।
Discussion about this post