গোটা বছর ধরে মা আসেন নানান রূপে। প্রকৃতি মা আমাদের কাছে হয়ে ওঠেন দেবী। কখনো দুর্গা, কখনো কালী তো কখনো মা জগদ্ধাত্রী। আর এ পুজোর কথা শুনলে প্রথমেই মনে আসে চন্দননগরের কথা। তবে তার পাশেই রয়েছে চুঁচুড়া শহর। সেই বা কম যায় কিসে! পুজোর আড়ম্বর সেখানেও যথেষ্ট। তবে সে এলাকায় আগে বেশ কিছু জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানে কেবলমাত্র জগদ্ধাত্রী পুজো হতো।
ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে চল হয় বারোয়ারি পুজোর। গোবর্দ্ধন ঘোষ, তারাপদ ভট্টাচার্য এবং কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষালের উদ্যোগে প্রথম শুরু হয় বারোয়ারি পুজো। সে পুজোয় প্রথম চাঁদা উঠেছিল মাত্র ৬৭ টাকা। এ পুজোর ঠিক দু তিন বছর পর থেকে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন হরপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। তিনি সমগ্র কনকশালী সহ আশেপাশের পাড়াকে সামিল করেন এ পুজোয়। ১৯৮২ সালে এক দুর্যোগের পর পূর্ণিমা তিথিতে সত্য নারায়ণ পুজো হয়ে শুরু হয় এ পুজোর কাজ। সে সময়ে অবশ্য ঘটক বাড়ির সামনের প্রাঙ্গণে এ পুজো হতো। এ বাড়িকে কেন্দ্র করেই পাড়ার নাম হয় ঘটকপাড়া।
বর্তমানে মায়ের যে মন্দির তা নির্মাণের কাহিনীই এক বিশাল ইতিহাস। শুরু থেকে বারে বারে পুজোর স্থান বদল হয়েছে। অবশেষে ১৯৯০-৯১ সালে নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে তা শেষ হয় ১৯৯৭ তে। শোনা যায়, মন্দির নির্মাণে প্রথম দাতা হিসেবে এগিয়ে আসেন গোপীনাথ সেন। সেই সাথে তারক মণ্ডল, দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ বসু, সমীর মুখার্জি, তপন সেন সহ অনেকে। রোজ মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর মাধ্যমে আজও যেন এ পুজো জেগে রয়েছে লক্ষ্মীরাণী সেনের হাত ধরে। পুরোনো উদ্যোক্তাদের অনেকেই আজ জীবিত নেই। তবে বর্তমান যুব প্রজন্ম নতুন উদ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে পুজো। যে পুজোর বয়স গিয়ে ঠেকেছে ৮০ বছরে। বলাই বাহুল্য ৬৭ পেরিয়ে পুজোর চাঁদার পরিমাণ এখন যথেষ্ট বেশি। এমনকি গত বেশ কিছু বছর ধরে মহিলাদের একটি দলও যোগ দেন চাঁদা তোলার কাজে।
সপ্তমী থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত চলে পুজো। তবে এ উৎসবে প্রধান পুজো হলো নবমীর পুজো। সেদিন থাকে অঞ্জলির পালা। তারপর দেওয়া হয় ভোগের প্রসাদ। মন্দিরের পাশের মাঠে সকলে একসঙ্গে বসে খাওয়ার আনন্দ ভাগ করে নেন ঘটকপাড়াবাসী। আর উৎসবের দোসর হয়ে চলে সন্ধ্যার অনুষ্ঠান। শীতের মরসুমে উৎসবে জমে ওঠার রেওয়াজ যেন শক্তি সঞ্চার করে আগামী দিনগুলোর।
Discussion about this post