তিনি তখন গ্ল্যামারের মধ্যগগনে। বাংলা সিনেমার স্বর্ণ যুগের একমাত্র মহানায়িকা তিনিই। যার একটি চাহনি বা এক চিলতে হাসিতেই ঘায়েল হত শত শত হৃদয়। বাঙালির রোমান্টিসিজমে তখন ওই একটিই নাম – মিসেস সেন অর্থাৎ সুচিত্রা সেন! শয়নে, স্বপনে যার মুখই ভেসে উঠত বাঙালির মনে। কিন্তু তাই বলে তাঁরই মুখের আদলে আস্ত এক দুর্গা প্রতিমা! হ্যাঁ, বাঙালি চাইলে কি-ই না সম্ভব৷ এককালে কলকাতার এক বিখ্যাত সার্বজনীন পুজোর প্রতিমার মুখের আদলে ছিলেন স্বয়ং সুচিত্রা সেনই!
সময়টা সেই পঞ্চাশ-ষাটের দশক। কলকাতার বিখ্যাত পুজো গুলোর মধ্যে একটি ছিল দমকলের পুজো। আর এই পুজো দেখতেই উপচে পড়ত ভীড়। অবশ্য বলা ভালো প্রতিমাকে দর্শন করতেই জমায়েত করতেন সাধারণ মানুষ। কারণ প্রতিমার মুখ অবিকল মহানায়িকার মতো। প্রতিমা শিল্পী ছিলেন শ্রী রমেশ পাল। পুজোর উদ্যোক্তা বা দর্শনার্থী, সবারই দাবী ছিল এই একটিই। প্রতিমার মুখ হবে মিসেস সেনের মতোই। তাই সেভাবেই দেবীর মৃন্ময়ী রূপ ফুটিয়ে তুলতেন শিল্পী।
প্রতিমার শাড়ি ছিল আগুন কমলা রঙের। সেই মূর্তির যেমন তেজ তেমনই অপূর্ব শৈল্পিক কারুকার্যে পরিপূর্ণ। কলকাতা দমকল বাহিনী এই পুজো দেখতে পথে নামত দর্শনার্থীর ঢল। তবে এত কিছুর পরও ১৯৬৩ সালে শেষ পুজো হয়ে তা বন্ধ হয়ে যায় বরাবরের মতো। দমকল বাহিনী নিজেদের পুজো সামলে এবং ব্যস্ততার কারনে নিজেদের পরিষেবা দিতে যাতে অক্ষম না হয়, ঠিক সেই কারণেই বন্ধ হয় এই পুজো। অবশ্য পরবর্তীকালে দমকলের পুজোরই বেশ কিছু উদ্যোক্তা ওই অঞ্চলেরই পাশে মহম্মদ আলি পার্কের পুজো শুরু করেন। তাই বন্ধ হয়ে গেলেও ষাটের দশকের কলকাতার শারদোৎসবের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসাবেই ইতিহাসের পাতায় নিজের স্থান করে নিয়েছে দমকলের সেই পুজো। যার নস্টালজিয়ায় আজও মজে কলকাতাবাসী।
Discussion about this post