সদ্য নববর্ষের খাওয়া শেষ করেছে বাঙালি। ফ্রিজে এখনও পেলেও পাওয়া যাবে অবশিষ্ট এক দু’পিস মিষ্টি। এরই মধ্যে দরজায় ধাক্কা মারছে ঈদ। বন্ধু বান্ধব, সহকর্মীর কাছ থেকে ইফতারের নিমন্ত্রণের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার কাজও চলছে নিজের নিয়মেই। এভাবেই এপ্রিলের প্রখর রোদে পায়ে পায়ে কাটছে কলকাতার রমজান মাস।
পার্ক সার্কাস সংলগ্ন বেক বাগান এলাকায় হাজির না হলে জানা হতো না এখানকার ইফতারি মেজাজ। রঙ-বেরঙের জামা কাপড়, জুতো, ব্যাগ, রঙিন সরবতের ঠান্ডা গ্লাস থেকে কেটে সাজানো তরমুজ, পেঁপে আর খরমুজা, সব কিছু নিয়ে এলাকার রাস্তাঘাট ভিড়ে ঠাসা থাকে সারা সন্ধ্যে। খাওয়া দাওয়া, কেনাকেটা চলতে থাকে প্রায় রাত দুটো পর্যন্ত। বাজারের ফল বিক্রেতা আসিফ ভাই জানালেন বিকেলে উপবাস শেষে প্রতিদিন বহু মানুষ ভিড় করে তাঁর ফলের স্টলে। ফলের দোকানের পাশেই হরেক রকমের শুকনো ফল ও বাদামের দোকান। সেখানে কাজু, কিশমিশ আর বাহারি খুরমা খেজুর প্যাকেট বন্দী করে নিতে ব্যস্ত খরিদ্দারেরা। আর একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো নানা রকমের সেমুইয়ের পাহাড় প্রমাণ এক দোকান। দোকানি সদা হাস্য ওয়াসিম হুসেন। মুখে হাসি নিয়েই বেচাকেনা করছে। কথা বলে জানা গেল জন্মসূত্রে সে কলকাতাবাসী। কাজের তাগিদে বর্তমান ঠিকানা উত্তরপ্রদেশ। প্রতিবার ঈদের মরসুমে শহরে আসে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে। সাথে প্রতিদিন নামাজ শেষে সামলায় দোকান।
রাস্তা বাড়ার সাথে সাথে চওড়া হয় ভিড়ের আয়তন। দু’পা এগোতেই দেখা মিলল ঈদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হালিমের হাঁড়ির। লাল সালু গায়ে জড়ানো হাড়ি থেকে ধোঁয়া ওঠা হালিম বড়ো হাতায় করে গিয়ে পড়ছে ছোট বড় সবার প্লেটে। শুধুমাত্র এই দোকানেই হালিমের হাঁড়ির জোগান থাকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ ছ’টা। আর ইফতারের দিন সেই সংখ্যাটা পৌঁছায় পনেরো কুড়িতে। এরই পাশ দিয়ে ফুটপাথের দু’দিক জুড়ে দেখা মিললো বিখ্যাত গোলাকার রুটির। বান রুটির মতো দেখতে এই রুটির স্টলেও গিজগিজ করছে রাত্রিকালীন ভিড়। জানা গেল এগুলি ঘুগনি সহযোগে পরিবেশিত হয়। আর লাচ্ছা পরোটার কথা জিজ্ঞাসা করতে সহাস্যে দোকানি জানালো ওটা তোলা রয়েছে ঈদের জন্য।
এর সাথে পাল্লা দিয়ে স্টল জমিয়েছে বাহারি কাবাবের দোকান। তেল, হলুদ, মশলা মাখানো বিভিন্ন সাইজের কাবাবের পিসগুলির কোনোটির গায়ে ধনেপাতা বাটা মাখানো সবুজ রঙ, কোনোটি মালাই দেওয়া সাদাটে রঙের। সবাই গরম তেলে ভাজা পোড়া হয়ে প্লেটে ওঠার জন্য অপেক্ষারত। সব মিলিয়ে জমজমাট এই সামসুর হুদা রোড। আনন্দনগরী কলকাতার অলিতে গলিতে এভাবেই বয়ে বেড়াচ্ছে ঈদের খুশি।
Discussion about this post