“স্বপ্ন আমার জোনাকি/ দীপ্ত প্রাণের মণিকা/ স্তব্ধ আঁধার নিশীথে/ উড়িছে আলোর কণিকা।” রবি ঠাকুরের কবিতা যেন দীপাবলির প্রেক্ষাপটে প্রতিটা আন্দোলিত মনেরই প্রতিধ্বনি। আলোর উৎসব দীপাবলি তাই অমাবস্যার করাল রূপের বিরুদ্ধে মানুষের আশার গান, সংঘবদ্ধতার গল্প। বিত্তবানের অট্টালিকা হোক বা প্রান্তিক মানুষের এক চিলতে আশ্রয়স্থল। দীপাবলির আবহে আলো সেজে উঠেছে সাধ্য মতো ঝিকিমিকি। অতীত ঐতিহ্যর স্মারক মাটির প্রদীপ যেমন নিজের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখেছে। বৈদ্যুতিন আলো দিনে দিনে তার অভিনবত্ব দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে মন প্রাণ, শহর থেকে গ্রামে।
কালীপুজো বা দীপাবলি উপলক্ষ্যে চলছে আলোর বিকিকিনি। কলকাতায় আলোর কেনা বেচার প্রসঙ্গ এলে শীর্ষে থাকে এজরা স্ট্রিটের নাম। সন্ধ্যায় এজরা স্ট্রিট এলে আলোর প্লাবনে প্লাবিত হতে হবে এক ঝটকায়। সিঙ্গল ও মাল্টি কালারের বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের আলো, রিমোট নিয়ন্ত্রিত টেপ লাইট, প্রদীপ স্ট্যান্ড (স্থির ও ঘূর্ণায়মান), ইলেকট্রিক ক্যান্ডেল, ওয়াটার ল্যাম্প, ফ্লোরাল লাইট, মিনার্ভা, গ্লোইং মোটিফ (স্বস্তিক/ওঁম), সুন্দর কাজ করা মেটাল ল্যাম্প সহ নানা ধরণের বৈদ্যুতিন লন্ঠন পাওয়া যাচ্ছে অনেকটাই কম মূল্যে। বিভিন্ন বিত্তের কথা মাথায় রেখে দোকানিরা ক্রেতাদের সাধ পূরণের জন্য আলোর পসরা নিয়ে হাজির হাসি মুখে।
দুর্গা ও লক্ষ্মীর পুজোর পর সাধারণ মানুষের পকেটের অবস্থা ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর’ গল্প। আনন্দের উৎসবে বাজেট বুঝে চলাটাও জরুরি। তাই আসুন দেখে নেওয়া যাক আলোর বাজারে পকেটে টান কতখানি পড়তে পারে আম জনতার। ৪০ মিটার সিঙ্গেল কালার এলইডি লাইটের দাম পড়বে ২৫০ টাকা, ৫০ মিটারের একই লাইটের দাম ২৮০ টাকা। মাল্টি-কালার্ড ৫০ মিটার এল.ই.ডি’র দাম পড়বে ৩৫০ টাকা। একই আলো ৩০০ ও ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যর বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৫৫০ ও ৬৫০ টাকায়। ইলেকট্রিক দীপ স্ট্যান্ডগুলোর দাম ১১০-১৩০ টাকা উচ্চতা অনুযায়ী। ঘূর্ণায়মান প্রদীপ স্ট্যান্ড পাওয়া যাচ্ছে ৬৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে উচ্চতা অনুযায়ী। মেটাল ল্যাম্পের (১২ ফুট) দাম পড়ছে ১৪০ টাকা, ওয়াটার সেন্সিটিভ ল্যাম্পের (১২ পিস্ ) দাম ১৬০ টাকা। রয়েছে নানা ডিজাইনের বৈদ্যুতিন লন্ঠন ৩৫০ টাকা থেকে শুরু। রিমোট কন্ট্রোল্ড টেপ লাইট পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকা প্রতি মিটার দরে।
এজরা স্ট্রিটে চলছে দেদার কেনাকাটা। বাজারটি বাস রাস্তা এবং মেট্রো স্টেশনের খুব কাছে বলেই কলকাতা সহ শহরতলির ক্রেতা ও খুচরো বিক্রেতার ভিড় হচ্ছে দেখার মতো। প্রসঙ্গত বাজার ঘুরে দেখা যাবে সিংহভাগ আলোই চিন থেকে আমদানি করা। হাতে গোনা ভারতীয় আলো যা রয়েছে দু’একটি। যদিও তা বৈচিত্র্যে কম ও দামে তুলনামূলক চড়া। অর্থ ও উৎসবের দোটানায় তাই সাধারণ মানুষের লক্ষ্য বাজেটের ভারসাম্য বজায় রেখে ঝলমলে মুখে বলতে পারা – “শুভ দীপাবলি।”
Discussion about this post