মানুষের জীবনের দৈনন্দিন কাজে একটা বড় অংশ জুড়ে আছে কাগজ। সে সকাল বেলার খবরের কাগজ হোক কিংবা প্রতিদিনের নানা ধরনের জরুরি কাজ সবেতেই কাগজের যোগসাজশ। কাগজ বা পেপার জিনিসটা কিন্তু বেশ আকর্ষণীয়। আজ যা আমাদের হাতের কাছে এতটাই সহজলভ্য, বহু যুগ আগে কিন্তু তা ছিল না। সেকাল থেকে একাল বিবর্তনের পর বিবর্তন। তারপরে আধুনিক পাতলা ফিনফিনে সহজলভ্য কাগজের উৎপত্তি। কিন্তু জানেন কি বিভিন্ন দেশে এই কাগজের বিবর্তনের রয়েছে ভিন্ন ধরনের ইতিহাস। আজ তেমনই কিছু হদিশ রইল আপনাদের জন্য।
বর্তমানে ‘Codex’ শব্দটির সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। কিন্তু জানেন কি এই ‘Codex’ আসলে কি? এর উৎপত্তি কোথায়? প্রাচীনকালে গ্রীস, ব্যবিলন বা চীনে কাঠের ছোটো ছোটো তক্তার উপর মোমের পরত লাগিয়ে তাতে ধাতুর শলাকা দিয়ে লেখা হতো। এ রকমের কয়েকটি তক্তা নিয়ে একটি বইয়ের রচনা হতো আর সেটিকে বলা হতো ‘Codex’।
এবার যেটার নাম বলব সেটা হল ‘Brick of Book’। ব্যবিলনে জ্যোতিষীরা তাদের বিদ্যা কাঁচা ইটের উপরে লিপিবদ্ধ করে তারপর সেগুলিকে পুড়িয়ে একটি বইয়ের মতন করে রাখতেন যাকে বলা হয় Brick of book। তবে শুধুমাত্র ব্যাবিলন নয় ভারতের উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর এর গোপালপুর গ্রামে এরকমই কিছু পোড়া মাটির উপরে লেখার নিদর্শন পাওয়া যায়। ভারতের প্রসঙ্গ যখন এলই তখন ভারতে প্রচলিত অন্য এক্তি পদ্ধতির কথা বলা যাক। সে যুগ থেকেই কাপড়ের উপর লেখার প্রচলন ভারতে কিন্তু বরাবর। তবে বর্তমানে যেমন নানা ধরনের রং পাওয়া যায় যা টেকসই আর চলে দীর্ঘদিন। তবে সে যুগে কিন্তু তেমন ছিল না। তাই কাপড়কে ভাল করে মাড় দিয়ে তাকে লেখার উপযুক্ত করে তোলা হত। এরপর তার ওপর কালো কালি কিংবা চক দিয়ে লেখা হতো।
তবে এই সবকিছুর বিবর্তনের মধ্যে দিয়েই মানুষ পেয়েছে কাগজ। শোনা যায় প্রায় দুই শতাব্দী আগে প্রথম চীনের আবিষ্কার হয় তুলোট কাগজ। যাকে বর্তমান কাগজের পূর্বসূরী বলা যেতেই পারে। ছেঁড়া কাপড়, পাট ও শনক গাছকে চুনের জলে দুই থেকে দশ দিন ভিজিয়ে রেখে তার মণ্ড তৈরি করে সেই মণ্ডকে ঘষে কাগজের মতো পাতলা আকারে তৈরি করা হত তুলোট কাগজ। কাগজ আবিষ্কারক হিসেবে ভারতীয়দের নামটাও কিন্তু যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য কারণ ৩২ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে গ্রীক সেনাপতি নিয়ারকোসের হাত ধরেই প্রথম ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তুলোট কাগজের ব্যবহার শেখে। তবে আরেকটা কথা কিন্তু না বললেই নয়। সেই সময়ে বিভিন্ন ধাতু, চামড়া এমনকি বিভিন্ন জীবজন্তু যেমন মৃত কচ্ছপের খোল পর্যন্ত লেখার জন্য ব্যবহার করা হতো। তবে সবচেয়ে উন্নত মানের লেখার দ্রব্য অর্থাৎ যাকে বর্তমানের কাগজ বলা হয় তার কিন্তু আবিষ্কারক প্রাচীন মিশরীয়রাই। কারণ তারাই প্রথম প্যাপিরাস গাছের ছাল থেকে কাগজের আবিষ্কার করে যার নাম দেওয়া হয় পেপার।
যা আজ এতটাই সহজলভ্য তা একসময় ছিল স্বপ্নাতীত। যুগের পর যুগ কাটে, বিবর্তনের পরিবর্তন হয় আর এভাবেই এগোতে থাকে সমাজ। যার অন্যতম বড় নিদর্শন কাগজ।
Discussion about this post