বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই হল ভারতের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সেই বৈচিত্র্য শুধু বসনে ভূষণে নয়, রয়েছে ভাষায়, সংস্কৃতিতে, উৎসবে। একই উন্মাদনার সাথে এ দেশে পালিত হয় দুর্গাপুজো, ঈদ, বড়দিন। সারাবছর মুসলিমরা অধীর আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করে থাকেন খুশির ঈদের। এ বছর সেই প্রতীক্ষা শেষ হবার পালা! কয়েকদিন পরেই ঈদের শুভেচ্ছায় ভরে উঠবে গোটা দেশ। ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ রমজান মাসে ‘রোজা’ পালন করেন। রমজান মাস যতই এগোতে থাকে ততই যেন প্রতীক্ষা বাড়ে ঈদের। হাওড়া জেলার আনাচে-কানাচের মানুষও বিশ্বজোড়া এই আনন্দের শরিক হয়ে উঠেন। সেরকমই উলুবেড়িয়া ইসলাম অধ্যুষিত অঞ্চলে অতি উৎসাহের সাথেই পালিত হয় পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদ।
মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, যখন রমজান মাস শুরু হয়, তখন বেহেশতের দরজাগুলি খুলে দেওয়া হয় এবং নরকের দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।” তাই তারা প্রত্যেকেই নিষ্ঠা ভরে রোজা পালন করে। রমজান মাস শেষে ঈদের দিন সকাল থেকেই সাজো সাজো রব পড়ে যায় প্রত্যেক মহল্লায়। সারাদিন ধরে চলে উৎসবের যাপন। সন্ধে নামতেই বিভিন্ন মহল্লা ভাসতে শুরু করে আলোর রোশনাইতে। প্রতি বছর রমজান মাসের মাঝামাঝি থেকেই উলুবেড়িয়ায় ঈদের কেনাকাটার ভিড় জমে রেডিমেড পোশাকের দোকানগুলিতে।
শহরের সব থেকে বড় মসজিদ হল উলুবেড়িয়ার জামে মসজিদ। এই মসজিদে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ নামাজ পড়েন। ঈদের দিনে মসজিদে কাতারে কাতারে লোকের সমাগম ঘটে। প্রায় সর্বত্রই মহল্লায় মহল্লায় কচিকাঁচারা রঙিন তোরণ তৈরি করে। উলুবেড়িয়ার নিমদিঘি অঞ্চলে মণ্ডপ-শিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রাস্তার ধারে দেখা যায় বড় বড় তোরণ। সেগুলি সাজানো হয় আলোকমালায়। প্রতি বছর এই তোরণগুলি মক্কার পবিত্র কাবা মসজিদের মিনারের আদলে তৈরি করা হয়। ঈদের নতুন চাঁদকে সালাম জানিয়ে নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি আর ওড়নায় সুসজ্জিত হয়ে ওঠে আট থেকে আশি। আতরের সুবাস গায়ে মেখে নামাজের পরে কোলাকুলির মাধ্যমে চলে শুভেচ্ছা বিনিময়। ঘরে ঘরে লাচ্ছা, সিমুই, পায়েসের গন্ধে চারপাশে খুশির পরিবেশ। এই উৎসবে বাড়ির মহিলাদের মেহেন্দি পরা, বন্ধুদের আমন্ত্রণ করার রীতি তো প্রচলিত রয়েছেই। ধর্মের বেড়া ভেঙে সকলেই উদ্যাপনে মেতে ওঠেন।
প্রতিবছর উলুবেড়িয়া কেন্দ্রীয় ঈদ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ইসালে সওয়াব ময়দানে ঈদের নামাজ উদযাপিত হয়। গত দুবছর করোনার আবহে ঈদের নামাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উলুবেড়িয়া কেন্দ্রীয় ঈদ উদযাপন কমিটি। ঈদের কেনাকাটাতেও ভাটা পড়েছিল যথেষ্ট। তবে চলতি বছরের চিত্রটা কিছুটা অন্যরকম হবে বলে আশা করা যায়। আসুন ধর্মের বেড়াজাল ভেঙ্গে সবাই মিলে কামনা করি, পবিত্র ঈদ নিয়ে আসুক প্রত্যেকের জীবনে সুখ-শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা।
Discussion about this post