বাংলা চলচ্চিত্রের কথা এলে একটা নামই যথেষ্ট উত্তমকুমার। তবে চলচ্চিত্র ছেড়ে যদি একটু জায়গা করে দেওয়া যায় কন্ঠের জন্য? তাহলে কেমন হয়? বাংলা ধারাবিবরণীর উত্তমকুমার বলা হয় তাঁকে। যার কন্ঠের জাদুতে মেতে থাকতো গোটা প্রাঙ্গণ। তিনি আর অন্য কেউ নন, খেলার মাঠে পরিচিত মুখ – অজয় বসু।
উত্তর কলকাতার গ্যালিফ স্ট্রিটে নিবাস ছিল তাঁর। কারোর কথায় তিনি ‘লাস্ট অফ দ্য মহিকানস’। পরনে সাদা ধুতি পাঞ্জাবি ছিল তার গরমের সাথী। আর শীতের দিনে গায়ে উঠতো স্যুট আর টাই। ইডেনে তাঁর কন্ঠে যখন শোনা যেতো, “নমস্কার, ইডেন থেকে বলছি আমি অজয় বসু। মেঘমুক্ত আকাশের তলায় ভারত এবং ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা সারিবদ্ধ হয়েছেন রাজ্যপালের সঙ্গে করমর্দনের জন্য…” ১৯৫৭ সাল থেকে রেডিওতে ধারাবিবরণীর যাত্রা শুরু হয় অজয় বসুর হাত ধরেই। অজয় বসু, কমল ভট্টাচার্য এবং পুষ্পেন সরকার এই ত্রয়ী মিলে ক্রিকেট আর ফুটবলকে পৌঁছে দিয়েছিলেন একেবারে প্রতিটি বাঙালির ঘরে ঘরে।
তবে তিনজনের মধ্যে অজয় বসুর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বলা চলে, তিনি ধারাবিবরণীর অভিধান রচয়িতা। শুদ্ধ বাংলায় অনর্গল কথা বলে যাওয়ার মত দক্ষতা সত্যিই অতুলনীয়। তাঁর জীবন ছিল নিয়মের সাথে জোড়া। যে কোনো খেলার ক্ষেত্রেই একেবারে গভীর অবধি বুঝে নিতেন তিনি। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রতিটা খুঁটিনাটি বিষয়ে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তার তুলনা টানা যেতেই পারে।
পেশার দিকে রাশভারী থাকলেও মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অমায়িক এক ব্যক্তিত্ব। জুনিয়রের হাতে মাইক্রোফোন তুলে দিতেন যথেষ্ট উদারতার সাথে। আবার কারোর ভুল ত্রুটিতে রেগে না গিয়ে বুঝিয়ে বলতে তিনিই পারতেন। অবসরে গুনগুন করতেন উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খানের গান। একদিকে ক্রীড়া সাংবাদিক অজয় বসু অন্যদিকে ধারাভাষ্যকর অজয় বসু। দুইয়ে মিলে মানুষ হিসেবে তার জুড়ি মেলা ভার। পরবর্তীতে মতি নন্দীর হাত ধরে ক্রীড়া সংবাদ মোড় নিলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বটে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে মতি নন্দী এবং অজয় বসু পরস্পরকে বেশ উপলব্ধি করতেন। ২০০৪ সালে ৮৪ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু যে শূন্যতা তৈরি করেছে, তা আজও অপূর্ণ।
Discussion about this post