দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম দারিদ্র্যতার চিত্র বারবার উঠে আসছে করোনা আবহে।করোনা ছাড়াও অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলেও মিলছেনা যথোপযুক্ত চিকিৎসা। অবহেলার কারণে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এরকম পরিস্থিতিতে এবার উদাসীনতা ও অবহেলার ফলে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় উঠে এল দুর্গাপুর হেলথ ওয়ার্ল্ড হাসপাতালের নাম।
গত ২৯ মে ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধা অঞ্জলি রায়কে ভর্তি করা হয় দূর্গাপুর হেলথ ওয়াল্ড হাসপাতালের আইসিসিইউ বিভাগে। নিউরোলজিস্ট ডাঃ উপেন্দ্র কুমার শাহ-র তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল ওই বৃদ্ধার। এরপর বৃদ্ধা আগের থেকে ভালো আছেন বলে বাড়ির লোককে জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১০ জুন তাকে জেনারেল বেডে স্থানান্তরিত করে। কিন্তু জেনারেল বেডে স্থানান্তরিত করার পর থেকেই ওনার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। ওই রোগিনীর বাড়ির লোকের অভিযোগ এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো রকমের কথা না শুনে ১৫ জুন বিকেলে তাকে ডিসচার্জ করে দেয়। এরপর বাড়ি আসার পর তার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়ে। পুনরায় ওনাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও হাসপাতালে তরফ থেকে কোনো রকমের সাহায্য মেলেনি বলে রোগীর পরিবার সূত্রে খবর। এরপর গত ২০ জুন দুপুরে নিজের বাড়িতেই ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।
মৃত অঞ্জলি রায়ের পুত্র শুভজিৎ রায় ডেইলি নিউজ রিলকে জানায়, ‘যথেষ্ট সুস্থ অবস্থাতেই অঞ্জলি দেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এমনকি তিনি নিজের পায়ে হেঁটেই হাসপাতালে প্রবেশ করেন। এরপর ওই বৃদ্ধার অবস্থার খানিকটা উন্নতি হওয়ায় তাকে জেনারেল বেডে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু সেখানে তাকে ঠিকমত পরিষেবা দেওয়া হয়না। ফলতঃ ওনার মায়ের শারীরিক অবস্থা আবার খারাপ হতে থাকে। এরপর বারংবার বারণ করা সত্ত্বেও জোর করে ওনার মাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডিসচার্জ করে দেয়। এর পরবর্তীতে কোনো রকমের সমস্যা হলে তৎক্ষণাৎ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হবে এই প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রয়োজনের সময় কোনো রকমের সাহায্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করেনি। ২০ জুন অঞ্জলি দেবীর মৃত্যুর পর পুরো ঘটনাটা স্থানীয় এসডিও, আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট ও স্থানীয় এমেলের মারফত মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি।’
আমরা যোগাযোগ করি দুর্গাপুর হেলথ ওয়ার্ল্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কোনো সদুত্তর দেন নি হাসপাতাল কতৃপক্ষ বরং মুখে কুলুপ আঁটেন তারা। এর পরবর্তীতে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করি দুর্গাপুরের এসডিও অনির্বাণ কোলের সঙ্গে। তিনি জানান, “পুরো বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে বিধাননগর সিএমওএইচ’কে জানানো হয়েছে। এখন তারাই এই বিষয়টির সম্পূর্ণ তদারকি করছেন।” একের পর এক ঘটনায় বারবার অভিযোগের আঙুল বিভিন্ন হাসপাতালের দিকে। প্রশাসনের উপযুক্ত সাহায্য ছাড়া এই পরিস্থিতির কখনোই সুরাহা হওয়া সম্ভব নয়। তাই দরকার উপযুক্ত প্রশাসনিক তদারকি। যাতে নতুন করে অকারণে উদাসীনতার কবলে পড়ে কোনো রোগীকে মারা যেতে না হয়।
কভার চিত্র ঋণ – ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল
এই খবর সংক্রান্ত সকল নথি আমাদের কাছে রয়েছে। আইনী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে তা পেশ করা হবে ‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর তরফে…
Discussion about this post