সুচিত্রা দাস, টোটো চালিকা, ভারত – পুজো আসছে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ টোটো চালকদের পেটে পড়ছে লাথি। টোটো ব্যবসাদার যারা, যাদের ৫-৬ করে টোটো চলে, তাদের বাড়বাড়ন্তের ফলে রাস্তায় অসংখ্য টোটো। ফলে সমস্যায় পড়ছে সাধারণ খেটে খাওয়া টোটো চালকরা। ভোর বেলা বেরিয়ে রাত ১০ টায় ফিরছি বাড়ি, কোনদিন ৩৫০ তো কোনদিন ৫০০ রোজগার হয়। সামান্য পুজোর জামাকাপড় কিনতে গেলে হাতে ছ্যাঁকা লাগার জোগাড়। তাও চাইব, পুজো সকলের ভালো কাটুক।
আসমা সুলতানা শাপলা, কথা সাহিত্যিক, বাংলাদেশ – আশ্বিনের সকাল আমার জন্য বিশেষ। কৈশোরের শুরুতে লালমাই পাহাড়ের পায়ের কাছের দিনগুলাতে আশ্বিন-কার্তিক কিবা শরতের আসা যাওয়া আমার চোখের সামনে-ছবির মতো। সরকারি কলোনির তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে সামনের ধানের জমিতে ফসলের রঙ বদলানো দেখেছি বছর বছর। তারপরেই অরণ্যগ্রাম। তারই সামনে পাহাড় আর সবটাকে আগলিয়ে থাকা নীল আসমান, এই আমার কৈশোর। কৈশোরের এই রাজষিক সম্পদের পাশে পাশে আর একটি বিষয় ছিল দুর্গা পুজা। ময়মনসিংহ শহরের অলিতে গলিতে দুর্গাপুজার মন্ডপ স্থাপন করা হয়। আমরা খালার বাড়িতে বেড়াতে এলে ঘুরে ঘুরে দেখেছি কত না মনোহরণ করা দুর্গার রূপ। পৃথিবীর আরেক রূপ তখন জানি না। কেবল মুগ্ধ হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখেছি অপরূপ এক নারী শক্তিকে। দিনে দিনে বড় হতে হতে জেনেছি তার শক্তির কথা। রূপের বাহার কিবা প্রেম পরিণয়ের নানা কাহিনী। আর শেষবেলায় এসে নিজের মধ্যেই দেখেছি দুর্গার আরেক রূপ।
বছর ঘুুরে সেই শরত এল। রাতে রাতে কুয়াশার চাদর বিছিয়ে শীত শীত বাতাস। সবুজ ফসলের গায়ে একটু একটু সোনার রঙ সাথে দুর্গার আসার অপেক্ষা। অবশেষে বোধন এল। পিতৃপক্ষের শেষ দিন আর দেবীপক্ষের শুরুর এই সময়টাকেই বোধন বলা হয়। আমি খুব ছোটবেলায় আম্মার মুখে যেমন হজরত মুহম্মাদের সিনা চাক হবার কাহিনী শুনতাম, সুরমা নদীর পারে মুক্তিযোদ্ধা খুন করার লোমহর্ষক কাহিনী শুনতাম তেমনি আম্মার মুখেই শুনতাম বোধনের গল্প-প্রচলিত লেখাপড়া নেই ছবি আঁকার উপর অথচ কিভাবে অচেনা অজানা শিল্পী চোখ বন্ধ করে একটানে আঁকতেন দেবীর চোখ, আরও নানা গল্প-পুজার কাহিনী। সময় যেতে চলেছে। একের পর এক চলতে থাকবে এক একটি পর্ব। তাই বোধনের শুরুতেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই বাংলাদেশ ও ভারতের সকল মানুষকে। আর দুই বাংলায় আমার অগণিত পাঠকের জন্য রইল সালাম ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা…
শারদীয়া রায়, উপাধ্যক্ষ, শ্রীরামপুর কলেজ, ভারত – বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজা আসন্ন। এপার-ওপার দুই বাংলার আকাশে – বাতাসে আগমনীর সুর বাজছে। শিউলির গন্ধে মাতোয়ারা ভুবন। বিগত বছরগুলোর মহামারীর আতঙ্ক কাটিয়ে আবার সবাই পুরানো ছন্দে মেতে উঠেছে আপামর বাঙালি। দুর্গতিনাশিনী মা এর আশীর্বাদে সবরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেটে উঠছে।। সারা দেশ আজ হিংসা-দ্বেষ, বর্বরতা,নৃশংসতায় ভরে উঠেছে, মা দশভূজার কাছে আমাদের প্রার্থনা তিনি তাঁর শক্তি দিয়ে মানবসমাজের এই অসুর রিপু গুলো দমন করে আমাদের রক্ষা করুন। আসুন আমরা সবাই মিলে জাতি-ধর্ম, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সুস্থ শরীরে, আনন্দিত চিত্তে এই উৎসবে যোগদান করি।
কবীর চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীত শিল্পী, ভারত – দুর্গাপুজোর সম্ভবত সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হচ্ছে কমিউনিটি। কোনো মানুষই কমিউনিটি ছাড়া একা একা বাঁচতে পারে না। পুজোর কটা দিন সেই একসঙ্গে বেঁচে থাকার আনন্দটা জাঁকিয়ে বসে। তার পাশাপাশি অরগ্যানিক ভাবেই তৈরি হয় খেটে খাওয়া মানুষের কয়েকদিনের উপার্জনের সুযোগ। সব মিলিয়ে জমজমাট ব্যাপার। পুজোর শুভেচ্ছা রইলো সবার জন্য। ভালো থাকুন, আগলে রাখুন, ভালো রাখুন পাশের মানুষকে।
মীর মনাম, সঙ্গীত শিল্পী, বাংলাদেশ – শুভ শারদীয় দুর্গা পুজো! এই পুজোর সময়টি শুভ এবং আনন্দময় হোক সকল ধর্মাবলম্বী মানুষদের নিয়ে। দুর্গা পুজো ও সঙ্গীত একে অপরকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। পুজোর সাথে সঙ্গীত এবং সঙ্গীতের ভাবনার রয়েছে বহু প্রাচীন মিল। সঙ্গীতের ভাবনা এবং দেবী দুর্গার চিহ্নিত ভাবমুদ্রা, সর্বদা একত্রে সমন্বিত হয় যা মূলভূত ভাবনা ও ধারণার একটি সংকেত। শুধু দুই দেশের নয় বরং সকল রকম কাঁটাতারকে ঊর্ধ্বে রেখে দুই বাংলারই রয়েছে এই পূজো নিয়ে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও রেওয়াজ। তাই প্রতিবারের ন্যায় এইবারও আশা রাখবো খুবই সুষ্ঠ সুন্দর ও সুনিপুণভাবে দুই বাংলার মানুষের এবারের পুজো কাটবে গানে-গানে মায়ের প্রতি ভক্তি আর আমাদের ভেতরের সব হিংসা, কষ্ট, গ্লানি, বৈশ্বিক যুদ্ধ, এগুলোর অবসান ঘটিয়ে। আর নিজের জন্য আমি চাইবো আমার গান ও কন্ঠের মাধ্যমে দেশ বিদেশের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীবাসীর কাছে পৌঁছে যেতে। সকলের জন্য দীর্ঘায়ু আর মঙ্গলমূলক আশীর্বাদ প্রার্থনা করছি। সর্বপরিশেষে সকলের পুজো ভালো কাটুক সেই প্রত্যাশা রাখছি। পুজোর অনেক শুভেচ্ছা রইল সকলকে। অসৎ শক্তির বলি হোক সৃষ্টি স্রষ্টার হাত দিয়ে। প্রত্যেকটি প্রাণী ফিরে পাক তার প্রত্যাশিত ধরণী।
রাহুল চক্রবর্তী, অধিকর্তা, IIARI, ভারত – দুর্গোৎসব শুধুমাত্র আবেগের উৎসব নয়, এটি মিলন উৎসবও বটে। বর্ণ – ধর্ম – জাতি নির্বিশেষে এক মহামিলন। IIARI এই বিশেষ ক্ষণে সকলকে জানায় শুভ শারদীয়ার প্রীতি ,শুভেচ্ছা ও ভালবাসা। এই দুর্গোৎসব হয়ে উঠুক সকলের মিলন-উৎসব।
জয়শ্রী, সঙ্গীত শিল্পী, ভারত – শরৎকাল এলেই ছোটবেলার প্রেমগুলোর কথা মনে পরে যায়। সেজেগুজে নতুন জামা, জুতো পরে প্যান্ডেলের পর প্যান্ডেল চষে বেড়ানো! রঙিন আইস্ক্রিম, সস্তার চাউমিন আর সুযোগ পেলে প্রেমিকের আঙুলগুলো ধরতে চাওয়ার ইচ্ছা। মনের বয়সটা কবে বেড়ে গেছে টের পাইনি, ইচ্ছেগুলো সময়ের সাথে বদলে গেছে। কমফোর্ট জোন ঘিরে ধরেছে। এবার বেরোতে হবে! শরৎ এসে গেছে। কাঁটাতারের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঢাকের শব্দে গমগম করছে। কমফোর্ট জোন ছেড়ে বেরিয়ে ময়মনসিংহ, শিলিগুড়ি, সিলেট, মালদা, চট্টগ্রাম, নদীয়া, কলকাতা, ঢাকার রাস্তাগুলো সরগরম করে তুলুন। পেট ভরে খান, বয়সকে পাত্তা না দিয়ে প্রাণ ভরে প্রেম করুন। যাদের পুজো নেই (ভিখারি, হকার, পুলিশ) তাদের সাহায্য (কো-অপারেট) করুন। দুই বাংলার সকলকে শারদীয়ার এক আকাশ শুভেচ্ছা।
সৌগত সিংহ, আলোক চিত্রী, ভারত – ‘দুর্গা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে যা দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করে। আশ্চর্যজনকভাবে এবারের দুর্গাপুজো কতকটা সেই রকম একটা সংকটের আবহের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একদিকে চরম উগ্ৰ সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, নেতাদের বিপুল আর্থিক দুর্নীতি সর্বোপরি প্রকৃতির রোষানলের চক্রব্যূহে আমরা বন্দী হয়ে পড়েছি। এসবের মাঝে আবার এখন তো দেবীপক্ষের আগেই পুজো শুরু হয়ে যাচ্ছে, যা স্বয়ং দুর্গাকেই খানিকটা সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সাংঘাতিক বিষয় সন্দেহ নেই। প্রতিবছর দুর্গাপুজো আমাদের জীবনে অনেক আশা নিয়ে আসে কিন্তু সাধারণ নাগরিকদের অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেখানেই থেকে যায় শুধু রাজনৈতিক অনুরাগে মেকি আড়ম্বর ও অনুদানের পরিমাণটা ধাপে ধাপে নয় লাফে লাফে বাড়তে থাকে। রিলস, পোস্ট লাইকের বন্যায় চাপা পড়ে যায় কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট, হাঁসখালি, স্বপ্নদীপ, আনিসের ‘Story’ গুলো। যার কথা কেউ শুনতে বা বলতে চায় না। ওগুলো বড্ড নেগেটিভ যে….
শুভঙ্কর ভট্টাচার্য্য, সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ, ভারত – খাদ্য রসিক ও আবেগী বাঙালির কাছে দুর্গা পুজো এক মহোৎসব। দেবীপক্ষের সূচনা লগ্ন থেকেই, বাঙালি মেতে ওঠে আমোদে, সেখানে তাদের আবেগের দিশা থাকে না। এই কথা যেমন আমি আপনি জানি ঠিক সেরকমই জানে সাইবার ক্রিমিনালরা। সুতরাং, এই সময় আমাদের বেশি সতর্ক থাকা উচিত। কোনো ই-কমার্স ওয়েবসাইটের চূড়ান্ত ডিসকাউন্টের লিংক আপনার হোয়াটসঅ্যাপে আসলে সেটি ক্লিক করার আগে ভালো করে দেখে নেবেন। পুজোয় চারিদিকে কিউআর কোডের (QR code) ছড়াছড়ি, কোনো কিউআর কোড স্ক্যান করার আগে নিশ্চিত হয়ে নেবেন সেটি সেই ব্যবসায়ীর না কোন ভুয়ো চক্রান্তকারীর। নইলে নিমেষে উড়ে যেতে পারে আপনার ব্যাংকের টাকা। পুজো স্পেশাল অফার বা ভিআইপি পাসের জন্য কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করতে চান? সেখানেও আছে বিপদ। পুজোয় লাইভ করার ইচ্ছা হলে ফ্রি ইন্টারনেটের লোভে কোনো পাবলিক নেটওয়ার্ক (বা ফ্রি wifi) এ কানেক্ট করার আগে ভেবে নেবেন। যখন কোন কিছু ফ্রি হয় তখন আপনিই প্রোডাক্ট। শেষে বলি, আপনার অন্যতম সুরক্ষা কবচ আপনার ফোনে আসা ওটিপি। তাই ফোনটির যত্ন নিতে ভুলবেন না।
Discussion about this post