এই বছরের দুর্গা পুজোর অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে গেলে আপনার মনে হতে পারে, আপনি হয়তো একেবারে সকাল সকাল কোন ফ্লাইট অথবা ট্রেন ধরতে যাচ্ছেন। গুপ্ত প্রেসের সূর্য সিদ্ধান্ত মতে রচিত পঞ্জিকা অনুসারে, এবছরের মহাষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়ার সময়সীমা মাত্র ১৫ মিনিট, ভোর ৫:৪৫ থেকে ৬:০০টা। পাশাপাশি, সন্ধি পুজো শুরু হবে সকাল ৬:২৪ থেকে। আর এটাই হয়ে উঠেছে এবছরের দুর্গা পুজোর সবচেয়ে বড় সমস্যা। সেই কারণেই, কলকাতার শতাব্দী ও অর্ধ-শতাব্দী প্রাচীন পুজোগুলিও এবছরের জন্য পাল্টাতে চলেছে তাদের নিয়ম। সূর্য সিদ্ধান্তের পরিবর্তে এই পুজো কমিটিগুলি এবছরের জন্য পুজো করতে চলেছে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে। নিয়ম পরিবর্তনের তালিকায় রামকৃষ্ণ মিশন, ম্যাডক্স স্কোয়ার কিংবা টালা বারোয়ারীর মত পুজো কমিটিগুলিও রয়েছে।
সংকীর্ণ সময়ের কারণে, কলকাতার বড় কিছু আবাসন সমিতিও এই একই পথে হাঁটতে চলেছে বলে খবর। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্তে অঞ্জলির সময় সকাল ৯:৩০ থেকে ১১:৩০ পর্যন্ত। আর তারপরে শুরু হবে সন্ধি পুজো। ফলে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য হাতে পাওয়া যাচ্ছে অনেকটা বেশি সময়। নিউটনের মৃত্তিকা এবং পাওয়ার টাওয়ার, টালিগঞ্জের মেট্রো সাউথ, এবছরের পুজো করবে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে। অন্যদিকে, বিশেষত্ব থাকবে রাজারহাটের সিদ্ধা পাইনসের পুজোয়। সূর্য সিদ্ধান্ত মতে পূজো হলেও এখানে নবমীতে একটি বিশেষ অঞ্জলির আয়োজন করা হবে, যারা ভোর ৫:৪৫-এ আসতে পারবেন না তাদের জন্য।
তবে অনেক বড়ো কমিউনিটি পুজো যেমন সমাজ সেবী, বাদামতলা আষাঢ় সংঘ, হাতিবাগান সার্বজনীন, মুদিয়ালি, কুমারটুলি সার্বজনীন ইত্যাদি সূর্য সিদ্ধান্তেই পুজো আয়োজন করবে। কাশী বোস লেন দুর্গাপুজো সমিতির প্রধান পুরোহিত জানিয়েছেন, অষ্টমীর সন্ধি পুজোর আয়োজনের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের ভোর ৩টায় উঠে প্রস্তুতি নিতে হবে। সঙ্গেই কড়া নির্দেশ, পুষ্পাঞ্জলি হবে একবারে, দফায় দফায় নয়।
সর্বভারতীয় প্রাচ্যবিদ্যা অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুশারির বক্তব্য অনুযায়ী, এই সময়সূচীর পরিবর্তন ঘটে তিথির সময়ের সঙ্কোচনের ফলে। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী, তিথির সাধারণ দৈর্ঘ্য ২৪ ঘণ্টা হলেও, এবছর তা সঙ্কুচিত হয়ে ১৫ ঘণ্টায় এসে ঠেকেছে। ১০ অক্টোবর সকাল ৭:২৬-এ অষ্টমী তিথি শুরু হলেও, যেহেতু সেইদিন সকালে সূর্য ওঠার সময় সপ্তমী ছিল, তাই সূর্য সিদ্ধান্ত মেনে চললে সেদিনটা সপ্তমী হিসেবেই গণ্য হবে। ফলে, অষ্টমী পুজো করা যাবে পরের দিন সকালে নবমী পড়ার আগে। এর ফলে পুজোর সময়সূচী অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে অঞ্জলি ও সন্ধি পুজোর মতো গুরুত্বপূর্ণ আচারগুলো পরিচালনা করতে সমস্যায় পড়ছেন সকলেই।
Discussion about this post